পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
১৭৭

 বাঙ্গালীর পরিচিত জলপিপি পাখী কি সংস্কৃত-সাহিত্যের কারণ্ডবের সহিত অভিন্ন? কিন্তু উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের কাদম্বরাজহংসের সহিত কোনও ঋতুতে ইহাকে দেখা যায় কি না সে সম্বন্ধে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে। অথচ আমাদের সংস্কৃত কাব্য-সাহিত্যে শরৎবর্ণনায় কারণ্ডবকে কাদম্ব-রাজহংস-সারসের সহিত অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে মিলিত দেখা যায়।

 এই সারস পাখীটিকে সাধারণতঃ আমাদিগের কাব্যসাহিত্যমধ্যে হংসজাতীয় জলচর ও স্থলচর বিহঙ্গগণের সহচররূপে পাইয়া থাকি। অন্যত্র আমরা ইহার কতকটা বৈজ্ঞানিক পরিচয় দিবার চেষ্টা করিয়াছি। আমাদের পাঠকপাঠিকাগণের নিকটে ইহার সম্বন্ধে বিশেষ কিছু নূতন তথ্য এখানে আর উপস্থিত করিতেছি না; তবে তাঁহাদিগকে স্মরণ করাইয়া দিতে চাই যে, পদ্মসমাকুল সরোবরের সহিত ইহার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখিয়া অভিধানকারগণ ইহাকে পুষ্করাহ্বয় বা পুষ্করাহ্ব আখ্যা প্রদান করিয়াছেন। ঋতুসংহারের কবি ইহার নিমিত্ত যে background রচনা করিয়াছেন, তাহা একটি তটিনী;—তাহার সলিল সরোরুহরজের দ্বারা অরুণীকৃত হইয়াছে। এই তটিনীতে সারসকে দেখা গেল বটে, কিন্তু তাহার কণ্ঠস্বর শুনাইবার জন্য মহাকবিকে প্রকৃতির রঙ্গমঞ্চে নূতন যবনিকার উত্তোলন করিতে হইল;—ইহার স্বভাবসুলভ সুদূরপ্রসারী তীব্র কণ্ঠস্বর সীমান্তরকে প্রতিনিনাদিত করিয়াসারস তুলিতেছে। এই যাযাবর পাখীটি সমস্ত শরৎ ঋতু ভারতবর্ষে অতিবাহিত করে, এই জন্য শরৎ ঋতুর বর্ণনায় মহাকবি ইহাকে উপেক্ষা করিতে পারেন নাই।

 কিন্তু এই শরৎ ঋতুতে বক ও ময়ূরের স্বভাবে পরিবর্ত্তন দেখা গেল। সূক্ষ্মদর্শী নিপুণ কবির দৃষ্টিকে তাহা এড়াইতে পারে নাই।