পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৮
পাখীর কথা

যাইতে পারেন না। মহাকবি কালিদাসের সূক্ষ্ম দৃষ্টিও ইহার উপরে পতিত হইয়াছে। চূতরসাসবে কোকিল পরিপুষ্ট হইয়া থাকে; নানা মনোজ্ঞকুসুমদ্রুমভূষিত পর্ব্বতের সানুদেশে “অন্যপুষ্টের” হৃষ্ট কলধ্বনি শ্রুত হয়;—কোকিলের আহার ও আবাস সম্বন্ধে কবিবর এইরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। জার্ডন বলেন—

 It frequents gardens, avenues and open jungles; and feeds almost exclusively, I believe, on fruits of various kinds.

 ফ্রান্‌ক্ ফিন্‌ও ঠিক এইরূপ মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছেন—

 Unlike most Cuckoos, the koel feeds on fruit entirely or almost so.

 এই ফলভুক্ পিকটির সম্বন্ধে স্বতঃই একটি প্রশ্ন মনের মধ্যে জাগিয়া উঠে;—ঋতুসংহারের কবি কেবলমাত্র বসন্ত বর্ণনায় কোকিলকে আসরে নামাইলেন কেন? অন্যান্য ঋতুতে সে কি প্রকৃতির জীবননাট্যে যবনিকার অন্তরালে আত্মগোপন করিয়া থাকে? তবে কি সে যাযাবর? Messenger of springএর মত মধুমাসের আগমন-বার্ত্তা ঘোষণা করিবার জন্য সহসা ফাগুন চৈতে সে তাহার পঞ্চম স্বরে দিগঙ্গনাগণকে চঞ্চল করিয়া তুলে? ইহার উত্তরে বিহঙ্গতত্ত্ববিৎ বলিবেন যে, ভারতবর্ষের কোকিল যাযাবর নহে; অর্থাৎ ঋতুবিশেষে সে অন্য কোনও পাখীর ন্যায় দেশ ছাড়িয়া চলিয়া যায় না। তবে সে ভারতবর্ষের মধ্যেই গ্রাম হইতে গ্রামান্তরে দিকে দিকে স্বেচ্ছায় উড়িয়া বেড়ায়; বৎসরের মধ্যে অধিকাংশ সময় বৃক্ষপত্রান্তরালে অথবা ঝোপের মধ্যে লুক্কায়িত থাকিতে ভালবাসে; আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, তাহার মৌনব্রত প্রায় ভঙ্গ হয় না। এই মৌনী পিক কিন্তু বসন্তাগমে মুখর হইয়া উঠে এবং যতই দিন যায় ততই তাহার কাকলী ভারতবর্ষের কুঞ্জে কুঞ্জে বনবীথিকায় পথিককে উন্মনা করিয়া দেয়। ম্যাকিণ্টসের পুস্তকে[১] দেখিতে পাই—

  1. Birds of Darjeeling and India by L. J. Mackintosh.