পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম ভাগ

 ‘এখানে এই সপ্তম প্রকোষ্ঠে সুসংযুক্ত একটী পক্ষিশালা রহিয়াছে, যথায় অনেক পারাবতমিথুন পরস্পরকে চুম্বন করিয়া সুখে অবস্থান করিতেছে। পিঞ্জরস্থ শুক দধিভোজন দ্বারা পূর্ণোদর ব্রাহ্মণের সূক্তপাঠের ন্যায় পড়িতেছে, এই মদনসারিকাটী (ময়না) গৃহস্বামীর আদরে লব্ধপ্রভাবা গৃহদাসীর ন্যায় অধিক শব্দ করিতেছে। কুম্ভদাসীর ন্যায় কোকিল পাখী বহু ফলের রস আকণ্ঠ পান করিয়া কূজন করিতেছে। হস্তিদন্তকিলকে পিঞ্জরসমূহ লম্বিত রহিয়াছে, লাবক পক্ষীরা যুদ্ধ করিতেছে। কপিঞ্জল পক্ষিসকল পিঞ্জরের ভিতর আলাপ করিতেছে। কপোতসমূহ ইতস্ততঃ প্রেরিত হইতেছে। গৃহময়ূর সানন্দে নৃত্য করিতে করিতে উহার বিবিধ-মণি-চিত্রিত পক্ষ বিস্তার করিয়া যেন রবিকরোত্তপ্ত প্রাসাদকে বীজন করিতেছে। রাশীকৃত চন্দ্রখণ্ডের ন্যায় অসংখ্য রাজহংসমিথুন যেন স্ত্রীলোকদিগের পদগতি শিক্ষা করতঃ উহাদের পশ্চাৎ পরিভ্রমণ করিতেছে; গৃহ-সারস-সমূহ অতিবৃদ্ধের ন্যায় মৃদুপদে বিচরণ করিতেছে।’

 এই পক্ষিবাটিকার বিবরণ কবি-কল্পিত হইলেও, প্রায় দেড়সহস্র বর্ষ পূর্ব্বে প্রচলিত পক্ষিপালন-প্রথার কতকটা আভাস দেয়, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কর্ত্তৃক সঙ্কলিত “শ্যৈনিকশাস্ত্র”[১] গ্রন্থে দেখিতে পাই যে, অন্যূন পাঁচশত বৎসর পূর্ব্বে এতদ্দেশীয় রাজগণ কর্ত্তৃক শ্যেন পক্ষী সমাদৃত হইত। তাঁহারা ঐ পক্ষীর সাহায্যে মৃগয়া করিয়া বড়ই আনন্দানুভব করিতেন। উক্ত গ্রন্থে শ্যেনপক্ষী সম্বন্ধে উপযুক্ত বাসস্থান, পথ্যাপথ্যনির্ণয় প্রভৃতি যাবতীয় বিষয় বিশদভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে লিপিবদ্ধ দেখিয়া আমাদের মনে হয়, তাৎকালিক ভারতীয় নৃপতিবৃন্দ যে পক্ষিদালন-ব্যাপারে

  1. শ্যৈনিকশাস্ত্র নামক গ্রন্থখানি, শাস্ত্রী মহাশয়ের মতে, কূর্ম্মাচল (কুমাউন) রাজ রুদ্রদেব (চন্দ্রদেব অথবা রুদ্রচন্দ্রদেব) কর্ত্তৃক খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ হইতে ষোড়শ শতাব্দীর অভ্যন্তরে বিরচিত হইয়াছিল। রুদ্রচন্দ্রদেবের নাম কেহ রুদ্রদেব কেহ বা চন্দ্রদেব বলিতেন।