পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২০
পাখীর কথা

পাখীটিকে grey goose বা কাদম্বজাতীয় হংস হইতে পৃথক্ করিতেছে। ইহার যাযাবর। ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে—গুজরাত, পঞ্জাব, সিন্ধু, রাজপুতানা ও উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের জলাভূমি-সন্নিধানে ইহাদিগকে বর্ষার প্রাক্কাল পর্য্যন্ত অবস্থান করিতে দেখা যায়। বর্ষাগমে ইহারা মানসসরোবরাভিমুখে প্রয়াণ করে। যাইবার সময় ইহাৱা যে পাথেয়স্বরূপ চঞ্চুপুটে কোমল মৃণালসূত্র অথবা বিসকিসলয় লইয়া আকাশমার্গে উড্ডীন হইবে, তাহা আদৌ আশ্চর্য্যের বিষয় অথবা অবাস্তব কবিকল্পনা মাত্র নহে; কারণ এই জলচর বিহঙ্গ উদ্ভিজ্জাশী। প্রধানতঃ জলজ উদ্ভিদই ইহাদের আহার্য্য। এখন সহজে প্রতীয়মান হইবে যে, রাজা পুরুরবার হৃদয়-পদ্ম ছিন্ন করিয়া অপ্সরা উর্ব্বশীকে আকাশমার্গে উড্ডীয়মানা দেখিয়া যদি কবির মনে লোহিতচঞ্চুচরণা সিতাবয়বা চঞ্চুপুটে ছিন্নবিসকিসলয়ধৃতা মানসোৎসুকচিত্তা রাজহংসীর ছবি জাগিয়া থাকে, তাহা কাব্য-সৌন্দর্য্যকে বাড়াইতে গিয়া তিলমাত্র সত্যের অপলাপ করে নাই।

 এই flamingo জাতীয় পাখীর যাযাবরত্বের কারণ আমি মেঘদূতের পক্ষীতত্ত্ব প্রসঙ্গে এইরূপ নির্দ্দেশ করিবার চেষ্টা করিয়াছি—“আহার্য্যের অভাব বৎসরের যে ঋতুতে হইবার সম্ভাবনা থাকে সেই ঋতুর প্রাক্কালেই যাযাবর বিহঙ্গগণ যে স্থলে আপনাদিগের অভ্যস্ত উপাদেয় খাদ্যের স্বচ্ছলতা বর্ত্তমান আছে, তথায় প্রয়াণ করিয়া থাকে। পক্ষিজাতির যাযাবরত্বের অন্যান্য গৌণ কারণ থাকিতে পারে, কিন্তু এই আহার্য্যের অভাবের আশঙ্কাই যে মুখ্য কারণ এ সম্বন্ধে বিহঙ্গতত্ত্ববিদ্‌গণের মধ্যে মতদ্বৈধ নাই।” এ সম্বন্ধে এ স্থলে ইহার অধিক কিছু বলিবার প্রয়োজন নাই। আর বর্ষাসমাগমে যে মানসসরোবর হংসকাকলীতে মুখরিত হইয়া উঠে, তাহা মূরক্রফ্‌ট্, স্বেন্ হেডিন্ প্রভৃতি পাশ্চাত্য পর্য্যটকগণ স্বচক্ষে লক্ষ্য করিয়া লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। এই মানসসরোবর কৈলাসের পাদদেশে অগ্নিকোণে অবস্থিত।