পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
২২১

বিক্রমোর্ব্বশীর মানসোৎসুকচিত্ত রাজহংস এবং মৃণালসূত্রাবলম্বিনী রাজহংসী দেখিয়া আমাদের মনে স্বতঃই মেঘদূতের “মানসোৎক আকৈলাসাৎ বিসকিসলয়চ্ছেদপাথেয়বান্” রাজহংসের চিত্র জাগিয়া উঠে।

 আর বিক্রমোর্ব্বশীর রাজহংসচিত্রটি কি সেই সঙ্গে ভাল করিয়া ফুটিয়া উঠে না? উন্মত্ত রাজার প্রলাপবাক্য স্মরণ করুন; রাজহংস তাহার সমস্ত রূপ ও সঙ্গীতোচ্ছ্বাসে সরোবরতট ও কাননতল উচ্ছ্বসিত করিয়া এখনই ’ত উড়িয়া যাইবে:—“নূপুরশিঞ্জিতের মত ও কি শুনা যায়? হা ধিক! এ ত মঞ্জীরধ্বনি নয়। দিঙ্মণ্ডল মেঘশ্যাম দেখিয়া মানসোৎসুকচিত্ত রাজহংস কূজন করিতেছে; এই সমস্ত মানসোৎসুক রাজহংস এই সরোবর হইতে উড়িয়া যাইবার পূর্ব্বে ইহাদিগকে আমার প্রিয়ার কথা জিজ্ঞাসা করি।—হে জলবিহঙ্গরাজ! তুমি মানসসরোবরে কিছু পরে যাইও; একবার তোমার বিসকিসলয় পাথেয়টুকু রাখ; আবার তুমি তুলিয়া লইও। আমার দয়িতার সংবাদটুকু দিয়া আমাকে শোকমুক্ত কর। রে হংস! তুই যদি সরোবর-তটে আমার নতভ্রূ প্রিয়াকে না দেখিয়া থাকিস্, তাহা হইলে কেমন করিয়া তুই তাহার কলগুঞ্জিত গতিভঙ্গিটুকু চোরের মত অপহরণ করিলি? তুই আমার প্রিয়াকে ফিরাইয়া দে। জঘনভারমন্থরা প্রিয়ার গতি দেখিয়া তুই নিশ্চয়ই তাহা চুরি করিয়াছিস। * * * এ কি! চৌর্য্যাপরাধে দণ্ডিত হইবার ভয়ে রাজার নিকট হইতে এ যে পলায়ন করিল!”

 ইহার মধ্যে আমাদের পরিচিত flamingo পাখীটির সম্বন্ধে একত্র মোটামুটি অনেক কথা পাওয়া গেল; তাহার কণ্ঠস্বর মঞ্জীরধ্বনির ন্যায়; তাহার কলগুঞ্জিত গতিভঙ্গিটুকু জঘনভারমন্থরা নারীর গতিকে স্মরণ করাইয়া দেয়; সে জলবিহঙ্গরাজ; মানসসরোবরে যাইবার জন্য তাহার চিত্ত উৎসুক হয়, যখন দিঙ্মণ্ডল মেঘশ্যাম দেখা যায়; প্রয়াণকালে সে পাথেয়স্বরূপ বিসকিসলয় চঞ্চুপুটে গ্রহণ করে।