পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৬
পাখীর কথা

ভাব ধারণ করিতেছে; সাধারণতঃ প্রাসাদের এমন দুর্গম স্থানে সে বাস করে, যে স্থান সে ব্যতীত আর সকলের দুরধিগম্য। বাস্তবিক ইহারা আমাদের দেশে অট্টালিকায়, মন্দিরচূড়ায়, প্রাচীরগাত্রে সাধারণতঃ বাস করে। ইহা বিদেশীয় পণ্ডিতগণও বিশেষভাবে লক্ষ্য করিয়াছেন। নাটকগুলির মধ্যে কোথাও আমরা বন্য কপোতের সাক্ষাৎ পাইলাম না। অতএব এস্থলে তাহার আলোচনা নিষ্প্রয়োজন।

চাতক

 পারাবত সম্বন্ধে আপাততঃ আর কিছু না বলিয়া, চাতকের কথা আলোচনা করা যাক্। মেঘদূতে আমরা ইহার অম্ভোবিন্দুগ্রহণ চতুরতার পরিচয় পাইয়াছি। বিক্রমোর্ব্বশী নাটকে দেখিতেছি যে, রাজা পুরুরবা “চাতক-ব্রত” অবলম্বন করিয়াছেন; এস্থলে বুঝিতে হইবে যে মহাকবি এমন একটি শব্দ প্রয়োগ করিয়াছেন, যাহাতে রাজার তাৎকালীন অবস্থা বুঝিতে কাহারও কষ্ট হইবে না; এই চাতকব্রতটা কি, এ প্রশ্ন যেন আদৌ উঠিতে পারে না, ইহা এতই অত্যন্তপরিচিত। আমরা কিন্তু কালিদাস-সাহিত্যের মধ্য হইতে মহাকবির ভাষায় ইহার তাৎপর্য্য গ্রহণ করিবার চেষ্টা করিব। মালবিকাগ্নিমিত্র নাটকে বিদূষক পারিশ্রমিক স্বরূপ কিছু দক্ষিণা চাহিয়া বলিলেন—“আমি শুষ্ক মেঘগর্জ্জিত অন্তরীক্ষে জলপানের ইচ্ছা করিয়া চাতকবৃত্তি অবলম্বন করিয়াছি।” এখানেও যেন মহাকবির মনে কোনও সংশয় নাই যে, আপামর সাধারণে এই বৃত্তিটি অতি সহজে বুঝিয়া লইবে। যেন চাতক পাখীর স্বভাবই এই যে—সে মেঘের নিকট হইতে বারিবিন্দু যাচ্ঞা করে। আবার অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকে রাজা স্বর্গলোক হইতে প্রত্যাবর্ত্তনকালে রথচক্রবিবরের মধ্য দিয়া নিষ্পতনশীল চাতককুল দেখিয়া স্থির করিলেন যে রথ বারিগর্ভোদর মেঘের ভিতর দিয়া চলিতেছে। এই পাখীটি যেন জলের জন্য সদাই উৎকণ্ঠিত; জলবিন্দু