পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৮
পাখীর কথা

কোকিল

 এখন পাঠকের অত্যন্ত পরিচিত কোকিলের কথা পাড়া যাক্। বিক্রমোর্ব্বশী নাটকের প্রারম্ভে সূত্রধার দূরে আকাশমার্গে কি একটা আর্ত্তস্বর শ্রবণ করিয়া ঠিক করিতে পারিতেছেন না যে, উহা আর্ত্ত কুররীর শব্দ, না কুসুম-রসে মত্ত ভ্রমরের গুঞ্জন অথবা ধীর পরভৃতনাদ। অসুরকর্ত্তৃক অপহৃতা উর্ব্বশীর আর্ত্তনাদে কেমন করিয়া কুররী, ভ্রমর ও পরভৃতের স্বর বলিয়া ভ্রম হইতে পারে ইহা বিচার্য্য;—শুধু কাব্যের দিক হইতে নহে, বিজ্ঞানের দিক হইতেও ইহার কৈফিয়ৎ লওয়া আবশ্যক। কুররীর সম্বন্ধে অনেক কথা আমরা পূর্ব্বেই বলিয়াছি; সুদূর গগনপথে তাহার কণ্ঠধ্বনি কেমন করিয়া করুণ shriekএ পরিণত হয়, তাহার আলোচনা করিয়াছি। এই মিষ্ট, তীব্র অথচ আর্ত্ত কণ্ঠস্বর, পরক্ষণেই কিন্তু কোমল মধুর ভ্রমরগুঞ্জন বলিয়া মনে হইতে না হইতেই, উহা ধীর পরভৃতনাদ কি না এইরূপ সংশয় উপস্থিত কেমন করিয়া হইতে পারে? দেখা যাইতেছে যে,—শব্দটা প্রথমে খুব তীব্র, পরে অপেক্ষাকৃত কোমল অথচ করুণ; কিন্তু সেই ধ্বনিতরঙ্গের মধ্যে একটা মত্ত প্রবাহ আছে; তার পরেই ধীর কোকিলের কুহুরবের মত,—করুণ আর্ত্তনাদ নয়, মত্ত গুঞ্জনও নয়। এই পরভৃতনাদ যে ধীর অথবা ইংরাজিতে যাহাকে বলে mellow note হইতে পারে সে সম্বন্ধে বোধ করি কাহারও সন্দেহ নাই; যদিও কোকিলের পঞ্চম স্বর পাশ্চাত্য শ্রোতার কাণে অনেক সময়ে অধীর বা shrill বলিয়া অনুমিত হইয়া থাকে। ফ্রান্‌ক ফিন্ প্রমুখ পণ্ডিতগণ পরভৃতনাদ আলোচনা করিতে বসিয়া ইহার “fine mellow call” এর উল্লেখ করিতে বাধ্য হইয়াছেন। উর্ব্বশীর আর্ত্তনাদেও যেন এই mellow call বা সকরুণ আহ্বানের ভাব সূচিত হইতেছে। এস্থলে বলা অবশ্যক যে কোকিলের কণ্ঠস্বর সাধারণতঃ পর্দ্দায় পর্দ্দায় চড়িতে থাকে,—এমন কি বিদেশীয়েরা এই