পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
২৫১

চ্ছ্বাস, ইহার পরিণতি ডিম্বপ্রসবে হয়; কিন্তু এই ডিম্বের ইতিহাস বিহঙ্গদম্পতির জীবনের একটি অত্যন্ত অভিনব রহস্যময় অধ্যায়। আমরা সে কাহিনী বিবৃত করিবার পূর্ব্বে ইহাদের কলস্বর সম্বন্ধে যে কথাটি বলিতে চাই, সেটি এই যে কোকিল যাযাবর বিহঙ্গ নহে; অর্থাৎ ঘূর্ণ্যমান ঋতুচক্রের আবর্ত্তনের সঙ্গে সঙ্গে সে যে দেশদেশান্তরে ঘুরিয়া বেড়ায় তাহা নহে; দেশের মধ্যেই অন্য ঋতুতে সে যখন অজ্ঞাতবাস করে, তখন তাহার কোন সন্ধান আমরা সহজে পাই না। ফাল্গুন চৈত্রে যখন দখিণে বাতাস প্রকৃতিকে চঞ্চল করিয়া তোলে, তখন সেই বায়ুবিকম্পিত পত্রান্তরালে ইহার আবাহন-সঙ্গীত পথিকের কর্ণগোচর হয়। এতদিন যে পাখী প্রকৃতির অন্তরালে মূক ও মৌন অবস্থায় প্রচ্ছন্ন ছিল, হঠাৎ সে আসন্ন বসন্তে আমাদের দেশের বন উপবনকে সঙ্গীতে মুখরিত করিয়া তোলে। মিঃ ষ্টুয়ার্ট বেকার পরিষ্কারভাবে লিখিয়াছেন—“In March it practises its voice and gets its throat into working order, and in September its voice breaks, gradually ceases, and the world has rest for a few cold weather months.”[১]

 এখন ইহার জীবনের যে অধ্যায়টি আলোচনা করিব সেটি রহস্যবিজড়িত এ কথা পূর্ব্বেই বলিয়াছি। প্রথমতঃ ইহারা ডিম্বপ্রসবের অথবা ডিম্বরক্ষার জন্য সচেষ্ট হইয়া কোনও নীড় রচনা করে না। অথচ ইহাদের প্রসূত ডিম্ব ফুটাইয়া শাবকোৎপাদনের জন্য যে আয়াস স্বীকার করিতে হয়, তাহা হইতেও ইহারা পরের নীড়ে চৌর্য্যবৃত্তি অবলম্বন করিয়া নিষ্কৃতি লাভ করিয়া থাকে। ডিম্ব সুকৌশলে অন্য পাখীর নীড়ে যখন উপনীত করা হয়, তখন সেই নীড়াভ্যন্তরস্থ বিজাতীয়া স্ত্রীপক্ষী—অসংশয়ে এই ডিমগুলিকে স্বীয়

  1. “The Oology of Indian Parasitic cuckoos” নামক প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য—Bombay Natural History Society Journal, Vol. XVII, p. 695.