পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম ভাগ
৩৭

সহিত এক গৃহমধ্যে রক্ষা করিবার পূর্ব্বে উহাদিগের চঞ্চুপুটের সামর্থ্য এবং পরিমাণের প্রতি লক্ষ্য করা উচিত; কারণ পরস্পর বিবাদ বাধিলে চঞ্চপুটই তাহাদিগের অস্ত্রের কার্য্য করে। অতএব সহজেই অনুমিত হয় যে, আক্রমণ কিংবা আত্মরক্ষার সময়ে যে পাখীটির চঞ্চু তীব্র এবং সুদীর্ঘ, তাহার বিজয়লাভ অবশ্যম্ভাবী; এবং যাহাদিগের চঞ্চু অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ও হীনবল, তাহারা আহত ও উপদ্রুত হইয়া থাকে। বিহঙ্গজাতির মধ্যে এরূপ পক্ষীও আছে, যাহাকে অযুগ্মাবস্থায় অপরজাতীয় পক্ষিগণের সহিত গৃহমধ্যে রাখিলে শান্ত ও সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান করিতে দেখা যায়; কিন্তু মিথুনাবস্থায় উক্তরূপে অপর পক্ষীর সহিত রক্ষা করিলে পক্ষিদ্বয় নিতান্ত উচ্ছৃঙ্খল হইয়া অপরাপর পাখীগুলিকে আক্রমণ করিতে থাকে। বীজাণুভোজী “ক্রস্‌বিল” (crossbill) পক্ষী মিথুনাবস্থায় উগ্রভাবাপন্ন হয় বলিয়া কখনই উহাকে অপর পক্ষিগণের সহিত একত্র রাখা বিধেয় নহে।

 ইহাই মোটামুটি সংরক্ষণের বিধি। পাখীগুলির স্বভাব যদি সুকোমল এবং বিদ্বেষবর্জ্জিত হয়, তাহা হইলে ইহাদিগের ভিন্ন ভিন্ন খাদ্যের প্রতি রুচি অথবা অবয়বের অল্পবিস্তর প্রভেদ থাকিলেও কিছু আসে যায় না। পক্ষিভবনটি বৃহৎ এবং সুপ্রশস্ত হইলে যথেচ্ছ বিচরণ এবং অবস্থানের নিমিত্ত প্রচুর জায়গা পাইয়া পাখীদিগের পরস্পর বিবাদ ঘটিবার কিছুমাত্র সম্ভাবনা থাকে না। অনেক সময়ে এইরূপ পক্ষিভবনে অবয়বের পার্থক্য সত্ত্বেও সুকোমল-স্বভাব বিহঙ্গগুলিকে একত্র রাখা বেশ চলে। কলিকাতানিবাসী শ্রীযুক্ত গোকুলচন্দ্র মণ্ডল মহাশয়ের পক্ষিগৃহে অতি ক্ষুদ্রকায় দুর্গাটুনটুনি হইতে বৃহৎকায় কৃষ্ণগোকুল (Oriole) পর্যন্ত একত্র নির্ব্বিবাদে অবস্থান করিতেছে। এইরূপ গৃহমধ্যে বিবিধ পাখীগণের উপযোগী খাদ্যের প্রাচুর্য্য এবং খাদ্যপাত্রগুলির বহু স্থানে স্থাপন-বিষয়ে পালকের সবিশেষ মনোযোগ থাকা আবশ্যক।