পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
পাখীর কথা

 (জ) সঙ্গে সঙ্গে কুলায়-রচনার মামুলী উপকরণগুলির পরিবর্ত্তনও সময়ে সময়ে লক্ষিত হয়; অর্থাৎ সচরাচর ভিয় ভিন্ন শ্রেণীর পাখীদিগের নীড় প্রস্তুতের নিমিত্ত আবহমান কাল হইতে যে সমস্ত মালমসলা নির্দ্দিষ্টরূপে ব্যবহৃত হইতে দেখা গিয়াছে, সেই মামুলী মালমসলার পরিবর্ত্তে নূতন উপকরণের সাহায্যে রচিত পাখীর বাসা অনেক সময়ে দৃষ্ট হয়। এই সমস্ত পরিবর্ত্তন পরম্পরাগত অভ্যাসের সম্পূর্ণ বিরোধী। বেশ বুঝিতে পারা যায় যে, পরিবর্ত্তনশীল পারিপার্শ্বিক অবস্থার সহিত মিলাইয়া জীবনযাত্রা নির্ব্বাহ করিবার নিমিত্ত পাখীকে বুদ্ধিবৃত্তি পরিচালনা করিতে হয়। অতএব কেমন করিয়া পাখী তাহার প্রথম বাসা রচনা করে, এই প্রশ্নের সদুত্তর Instinct বা সহজ-সংস্কারের নিকট হইতে পাওয়া যাইবে না। এই শ্রেণীর পক্ষিতত্ত্ববিদ্ বলেন যে, পাখীর প্রবল অনুকরণ-প্রিয়তা, তাহার স্মৃতিশক্তি, বিচারশক্তি এবং বংশপরম্পরাগত অভ্যাস, এই সমস্ত মিলিয়া তাহাকে নীড়-রচনায় প্রণোদিত করে। মানুষের মত পাখীরও reason অথবা বিচারশক্তি আছে, যদিও অপেক্ষাকৃত ন্যূন পরিমাণে। আবদ্ধ অবস্থায় সকল পক্ষী স্বশ্রেণীর উপযোগী নীড় প্রস্তুত করিতে পারে না। অনেক সময়ে দেখা যায় যে, কেনেরি (canary) পক্ষী বাসা রচনা করিতে গিয়া সমস্ত উপকরণগুলিকে নাড়িয়া চাড়িয়া এলোমেলোভাবে স্তূপীকৃত করিয়া রাখে মাত্র; অবশ্য তাহার উপর ডিম্বগুলি রাখা যাইতে পারে, কিন্তু মোটের উপর সেটাকে কিছুতেই পাখীর বাসা বলা যায় না। অধিক স্থলে ডিম্বের অনিষ্টও ঘটিতে দেখা যায়; হয় ইহা বাসা হইতে পড়িয়া যায়, অথবা উপযুক্ত আশ্রয় অভাবে ক্রমাগত নড়িয়া চড়িয়া ইহাতে আঘাত লাগিয়া থাকে। এই জন্যই পক্ষিপালক পক্ষিগৃহমধ্যে শুধু যে উপকরণগুলি ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত:করিয়া নিশ্চিন্ত থাকিবেন তাহা নহে; অনেক সময়ে তাঁহাকে স্বহস্তে সেই খড়কুটাগুলি সেই শ্রেণীর পক্ষিকুলায়ের