পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম ভাগ
৬৫

প্রসবের পর হইতেই একাগ্রমনে দিবারাত্র সেই ডিম্বগুলির উপর তাহাকে সন্তর্পণে বসিয়া থাকিতে হইবে। যতদিন না ডিম ফুটিয়া শাবক বাহির হয়, ততদিন সে কোনও দিকে দৃক্‌পাত না করিয়া আপন মনে উহাতে তা দিতে থাকিবে। দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ অতিবাহিত হইয়া যায়, তথাপি সে অবিচলিত চিত্তে তাহার ব্রত উদ্‌যাপন না হওয়া পর্য্যন্ত একভাবে বসিয়া থাকে। এ’ত মন্দ রহস্য নয়। যে পক্ষিণী চিরদিন অত্যন্ত চঞ্চল প্রকৃতি বলিয়া আমাদের নিকট পরিচিত; সারাদিন পক্ষ-বিস্তার করিয়া আকাশমার্গে উড্ডীয়মান হইতে ভালবাসিত; আজ কোন্ মায়ামন্ত্রবলে তাহার স্বভাবের এত পরিবর্ত্তন সংঘটিত হইল? হঠাৎ সে কেমন করিয়া এমন স্থাণুত্ব প্রাপ্ত হইল। একেবারে নিশ্চল হইয়া এতক্ষণ একই ভাবে তাহার বাসাটির উপরে সে বসিয়া রহিল! হয় ত সে হিংস্রস্বভাব; অসহায় কীটপতঙ্গকে ও বিজাতীয় পক্ষিশাবককে সে চিরদিন নিজ ভক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করিয়া আপনার উদরপূর্ত্তি করিতে ভালবাসিত; আজ সে অত্যন্ত স্নেহপরবশ হইয়া তাহার গলাধঃকৃত আহার্য স্বেচ্ছায় উদ্গীরণ করিয়াডিম্বপ্রসব ও পাখীর চরিত্র-পরিবর্ত্তন শাবকের মুখে তুলিয়া দিতেছে! হয় ত সে ভীরুস্বভাবা; সাধারণতঃ আত্মরক্ষার জন্য সভয়ে মানুষের নিকট হইতে বহুদূরে বিচরণ করে; আজ সে একেবারে নির্ভীক! তাহার আচরণ দেখিয়া কিছুতেই মনে করা যায় না যে, সে স্বভাবতঃ মানবভয়ভীতা; এখন মানুষ তাহার কাছে আসিতেছে; তাহার গায়ে হাত দিতেছে, হয়ত তাহাকে তাহার বাসা হইতে ঊর্দ্ধে উত্তোলিত করিতেছে[১]; কিন্তু

  1. আমাদের পক্ষিগৃহমধ্যে পাখীর ডিম লইয়া এই অবস্থায় অনেক প্রকার নাড়াচাড়া করা হইয়াছে। আমি নিজে লক্ষ্য করিয়াছি যে, কেনেরি (Canary) পাখী যখন তাহার ডিমে তা দিতে থাকে, তখন তাহার গাত্র স্পর্শ করিলেও সে সঙ্কুচিত হয় না; এমন কি তাহাকে হাতে করিয়া ধরিয়া তুলিয়া লইবার উপক্রম করিলেও সে সেই ডিম পরিত্যাগ