পাতা:পাগলা ঝোরা - ললিতকুমার শর্ম্মা.pdf/২২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাগলা ঝোরা RRo পরলোকপ্ৰাপ্তির পর সিংহাসনারূঢ় হইয়া অবধি তিনি কখনও সাধুর সঙ্গলাভের জন্য উৎসুক হয়েন নাই, সাধুর সন্ধান পৰ্যন্ত লয়েন নাই। “সাধু অন্যাপি জীবিত আছেন কি, জীবিত থাকিলেও আমাকে চিনিতে পরিবেন কি, চিনিতে পারিলেও আর আমার প্রতি পূর্বের ন্যায় সস্নেহ ব্যবহার করিবেন কি,’ ইত্যাদি বিতর্ক করিতে করিতে অনন্যগতি রাজা সেই সাধুসনদর্শনে চলিলেন। সাধুর উর্টজ প্রাঙ্গণে উপনীত হইয়া তিনি সাধুকে কুটীরাভ্যন্তরে উপবিষ্ট দেখিয়া সাষ্টাঙ্গ-প্ৰণিপাতপূর্বক কাতরস্বরে বলিলেন, “প্ৰভু, আমি বলি রাজা। আপনার শ্ৰীচরণদর্শনার্থ আসিয়াছি।” তচ্ছবিণে সাধু কঠোরবচনে উত্তর করিলেন, “কি বলিলে ? তুমি বলি রাজা ? মিথ্যা কথা । তোমার মত উন্মাৰ্গগামী অপ্ৰকৃতিস্থ ব্যক্তি আমার আশ্রমপ্ৰবেশের, আমার উপদেশগ্ৰহণের অধিকারী নহে। বিনয়ী অনুতপ্ত ধৰ্ম্মভীরু ব্যক্তিকেই আমি গ্ৰহণ করি। তুমি এ শান্তিরসাম্পদ স্থান হইতে অবিলম্বে প্ৰস্থান কর।” সাধুপুরুষের এই পরুষবাক্যশ্রবণে রাজা বাজাহতের ন্যায় স্তম্ভিত হইলেন। তঁহার শেষ অবলম্বনও নিস্ফল হইল, জগতে তাহার। আর আশ্রয়স্থান নাই। তখন সেই নৈরাশ্যের পীড়নে রাজার হৃদয়ে এক অননুভূতপূৰ্ব্ব পরিবর্তন আরব্ধ হইল। তিনি প্ৰণিধান করিয়া বুঝিলেন, অত্যধিক অহঙ্কারবশতঃ তাহার এবংবিধ দুৰ্দশা, তিনি সংসার সমাজ সহধৰ্ম্মিণী কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত, সাধুজনের অস্পৃশ্য। তখন তিনি কলঙ্কিত জীবনের জন্য নিৰ্বেদগ্ৰস্ত হইয়া সাধুর চরণ ধারণ করিতে উদ্যত হইলেন ও বাস্পরুদ্ধকণ্ঠে বলিলেন, “প্ৰভু, এতক্ষণে বুঝিয়াছি, আমি ঘোর পাপী । পাপাচারের জন্য প্ৰায়শ্চিত্ত করিতে প্ৰস্তুত আছি । আমি । সন্ন্যাস অবলম্বন করিব, অনুগ্রহপূর্বক অবিলম্বে আমায় দীক্ষিত করুন।”