পাতা:পাঠমালা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
শকুন্তলা।

হইয়া আমাকে অবজ্ঞা করিলি—আমি অভিশাপ দিতেছি-তাহাকে স্মরণ করাইয়া দিলেও সে তোকে স্মরণ করিবেক না।

 প্রিয়ংবদা শুনিতে পাইয়া ব্যাকুল হইয়া কহিতে লাগিলেন হায়! হায়! কি সর্বনাশ হইল! শূন্যহৃদয়া শকুন্তলা কোন পূজনীয় ব্যক্তির নিকট অপরাধিনী হইল। এই বলিয়া সেই দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া কহিতে লাগিলেন সখি! যে সে নয়, ইনি দুর্ব্বাসা, ইঁহার কথায় কথায় কোপ; ঐ দেখ শাপ দিয়া রোষ ভরে সত্বরে প্রস্থান করিতেছেন। অনসূয়া কহিলেন প্রিয়ংবদে! বৃথা আক্ষেপ করিলে আর কি হইবে বল? শীঘ্র গিয়া পায় ধরিয়া ফিরাইয়া আন; আমিও এই অবকাশে কুটীরে গিয়া পাদ্য অর্ঘ প্রভৃতি প্রস্তুত করিয়া রাখিতেছি। প্রিয়ংবদা দুর্ব্বাসার পশ্চাৎ ধাবমান হইলেন। অনসূয়া কুটীরাভিমুখে প্রস্থান করিলেন।

 অনসূয়া কুটীরে পহুছিবার পূর্ব্বেই, প্রিয়ংবদা পথিমধ্যে তাঁহার নিকট উপস্থিত হইয়া কহিলেন সখি! জানইত, সে স্বভাবতঃ অতি কুটিলহৃদয়; সে কি কাহারও অনুনয় শুনে। তথাপি অনেক বিনয়ে কিঞ্চিৎ শান্ত করিয়াছি। যখন দেখিলাম নিতান্তই ফিরবেন না তখন চরণে ধরিয়া কহিলাম ভগবন্! সে তোমায় কন্যা, তোমার প্রভাব ও মহিমা কি জানে? কৃপা করিয়া তাহার এই অপরাধ ক্ষমা করিতে হইবেক। তখন তিনি কহিলেন আমি যাহা কহিয়াছি, অন্যথা হইবার নহে; তবে যদি কোন অভিজ্ঞান দর্শাইতে পারে, তাহার শাপ মোচন হইবেক; এই বলিযাই চলিয়া গেলেন। অনসূয়া কহিলেন ভাল, এখন আশ্বাসের পথ হইয়াছে। রাজর্ষি প্রস্থান কালে শকুন্তলার অঙ্গুলিতে এক স্বনামাঙ্কিত অঙ্গুরীয় পরাইয়া দিয়া গিয়াছেন। অতএব শকুন্তলার হস্তেই শকুন্তলার শাপ মোচনের উপায় রহিয়াছে, রাজা