পাতা:পাঠমালা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শকুন্তলা।
৩৫

যদিই বিস্মৃত হন, তাঁহার সেই স্বনামাঙ্কিত অঙ্গরীয় দেখাইলেই স্মরণ হইবে। উভয়ে এইরূপ কথোপকথন করিতে করিতে কুটারাভিমুখে চলিলেন।

 কিয়ৎক্ষণে উভয়ে কুটীরদ্বারে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন শকুন্তলা, করতলে কপোল বিন্যাস করিয়া, স্পন্দহীনা, মুদ্রিত নয়না, চিত্রার্পিতার ন্যায় উপবিষ্টা আছেন। তখন প্রিয়ংবদা কহিলেন অনসূয়ে! দেখ দেখ, শকুন্তলা পতিচিন্তায় মগ্ন হইয়া একবারেই বাহ্যজ্ঞানশূন্য হইয়া রহিয়াছে; ও কি অতিথি অভ্যাগতের তত্ত্বাবধান করিতে পারে। অনসূয়া কহিলেন সখি! এই বৃত্তান্ত আমাদের মনে মনেই থাকুক, কোন মতেই কর্ণান্তর করা হইকেক না; শকুন্তলা শুনিলে প্রাণে বাঁচিবেক না। প্রিয়ংবঙ্গা কহিলেন সখি! তুমি কি পাগল হয়েছ! এ কথাও কি শকুন্তলাকে শুনতে হয়? কোন্ ব্যক্তি উষ্ণ জলে নবমালিকা সেচন করে?

 কিয়ৎ দিন পরে মহর্ষি কণ্ব সোমতীর্থ হইতে প্রত্যাগমন করিলেন। এক দিন তিনি অগ্নিগৃহে প্রবিষ্ট হইয়া হোমকার্য্য সম্পাদন করিতেছেন, এমন সময়ে এই দৈববাণী হইল “মহর্ষে! রাজা দুস্মন্ত, মৃগয়া উপলক্ষে তোমার তপোবনে অসিয়া, শকুন্তলার পাণিগ্রহণ করিয়া গিয়াছেন এবং শকুন্তলাও তৎসহযোগে গর্ডবতী হইয়াছেন”। মহর্ষি এইরূপে শকুন্তলার পরিণয়বৃত্তান্ত অবগত হইয়া, তাঁহার অগোচরে ও সম্মতি ব্যতিরেকে সম্পন্ন হইয়াছে বলিয়া, কিঞ্চিন্মাত্রও রোষ বা অসন্তোষ প্রদর্শন করিলেন না; বরং যৎপরোনাস্তি প্রীত হইয়া কহিতে লাগিলেন আমার পরম সৌভাগ্য যে শকুন্তলা এতাদৃশ সৎপাত্রের হস্তগতা হইয়াছে। অনন্তর প্রফুল্লবদনে শকুন্তলার নিকটে গিয়া সাতিশয় পরিতোষ প্রদর্শন করিয়া কহিলেন বৎসে! আমি তোমার পরিণয়বৃত্তান্ত অবগত হইয়া আনির্ব্বচনীয় প্রীতি প্রাপ্ত হই-