পাতা:পাঠমালা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শকুন্তলা।
৩৭

কারিয়া যাইতে আমার পা উঠিতেছে মা। প্রিয়ংবদা কহিলেন সখি! তুমিই যে কেবল তপোবন বিরহে কাতর হইতেছ এরূপ নহে; তোমার বিরহে তপোবনের কি অবস্থা হইতেছে দেখ। দেখ! সচেতন জীব মাত্রেই নিরানন্দ ও শোকাকুল; হরিণগণ আহার বিহারে পরাঙ্মখ হইয়া স্থির হইয়া রহিয়াছে, মুখের গ্রাস মুখ হইতে পড়িয়া যাইতেছে; ময়ূর ময়ূরী নৃত্য পরিত্যাগ করিয়া উর্দ্ধমুখ হইয়া রহিয়াছে; কোকিলগণ আম্রমুকুলের রসাম্বাদে বিমুখ হইয়া নীরব হইয়া আছে; মধুকর মধুকরা মধুপানে বিরত হইয়াছে ও গুন গুন ধ্বনি পরিত্যাগ করিয়াছে।  কণ্ব কহিলেন বৎসে! আর কেন বিলম্ব কর? বেলা হয়। তখন শকুন্তলা কহিলেন তাত! বনতোষিণীকে সম্ভাষণ না করিয়া যাইব না। এই বলিয়া বনতোষিণীর নিকটে গিয়া কহিলেন বনতোষিণি! শাখাবাহুদ্বারা আমাকে স্নেহভরে আলিঙ্গন কর; আজি অবধি আমি দুরবর্ত্তিনী হইলাম। অনন্তর অনসূয়া ও প্রিয়ংবদাকে কহিলেন সখি! আমি বনতোষিণীকে তোমাদের হস্তে সমর্পণ করিলাম। তাঁহাৱা কহিলেন সখি! আমাদিগকে কাহার হস্তে সমর্পণ করিলে বল? এই বলিয়া শোকাকুল হইয়া রোদন করিতে লাগিলেন। তখন কণ্ব কহিলেন অনসুয়ে! প্রিয়ংবদে! তোমরা কি পাগল হইলে? তোমরা কোথায় শকুন্তলাকে সান্ত্বনা করিবে, না হয়ে তোমরাই রোদন করিতে আরম্ভ করিলে।

 এক পূর্ণগর্ভা হরিণী কুটীরের প্রান্তে শয়ন করিয়াছিল; তাহার দিকে দৃষ্টিপাত হওয়াতে, শকুন্তলা কণ্বকে কহিলেন তাত! এই হরিণী নির্ব্বিঘ্নে প্রসব হইলে আমাকে সংবাদ দিবে, ভুলিবে না বল? কণ্ব কহিলেন, না বৎসে! আমি কখনই বিস্মৃত হইব না।