পাতা:পাঠমালা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শকুন্তলা।
৩৯

চনা করিয়া, অন্যান্য সহধর্ম্মিণীর ন্যায়, শকুন্তলাতেও স্নেহ দৃষ্টি রাখিবে। আমাদের এই পর্যন্ত প্রার্থনা। ইহার অধিক ভাগ্যে থাকে ঘটিবেক; তাহা আমাদের বলিয়া দিবার নয়”।

 শার্ঙ্গরবের প্রতি এই সন্দেশ নির্দ্দেশ করিয়া শকুন্তলাকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন বৎসে! এক্ষণে তোমাকেও কিছু উপদেশ দিব। আমরা বনকর্মী বটি; কিন্তু লৌকিক বৃত্তান্তেরও নিতান্ত অনভিজ্ঞ নহি। তুমি পতিগৃহে গিয়া গুরুজনদিগের শুশ্রুষা করিবে, সপত্নীদিগের সহিত প্রিয়সখীব্যবহার করবে, পরিচারিণীদিগের প্রতি সম্পূর্ণ দয়া দাক্ষিণ্য প্রদর্শন করবে, সৌভাগ্যগর্ব্বে গর্ব্বিত হইবে না, স্বামী কার্কশ্য প্রদর্শন করিলেও রোষবশা ও প্রতিকূলচারিণী হইবে না, মহিলারা এরূপ ব্যবহারিণী হইলেই গৃহিণীপদে প্রতিষ্টিত হয়, বিপরীতকারিণী কুলের কণ্টক স্বরূপ। ইহা কহিয়া বলিলেন দেখ, গোতর্মীই বা কি বলেন? গোতমী কহিলেন বধূদিগকে এই বই আর কি কহিয়া দিতে হইবেক? পরে শকুন্তলাকে কহিলেন বাছা? উনি যে গুলি বলিলেন সকল মনে রাখিও।

 এইরূপে উপদেশ প্রদান সমাপ্ত হইলে, কণ্ব শকুন্তলাকে কহিলেন বৎসে! আমরা আর অধিক দুর যাইব না। আমাকে ও সখীদিগকে আলিঙ্গন কর। শকুন্তলা অপূর্ণ নয়নে কহিলেন অনসূয়া প্রিয়ংবদাও কি এই খান হইতে ফিরিয়া যাইবে? ইহার সে পর্যন্ত আমার সঙ্গে যাউক। কণ্ব কহিলেন বংসে। ইহাদের বিবাহ হয় নাই; অতএব সে পর্যন্ত যাওয়া ভাল দেখায় না; গোতমী তোমার সঙ্গে যাবেন। শকুন্তলা পিতাকে আলিঙ্গন করিরা গদগদস্বরে কহিলেন তাত! তোমাকে না দেখিয়া সেখানে কেমন করিয়া প্রাণ ধারণ করিব। এই বলিতে বলিতে দুই চক্ষে ধারা বহিতে লাগিল। তখন কণ্ব অশ্রুপূর্ণনয়নে কহি-