পাতা:পাঠমালা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
শকুন্তলা

প্রতিজ্ঞা করিয়া, এক্ষণে এরূপ দুৰ্বাক্য কহিয়া প্রত্যাখ্যান করা তোমার কর্ত্তব্য নহে।

 রাজা শুনিয়া কিঞ্চিৎ কোপাবিষ্ট হইয়া কহিলেন ঋষিতনয়ে! যেমন বর্ষাকালীন নদী তীরতরুকে পতিত ও আপনার প্রবাহকেও পঙ্কিল করে, সেইরূপ তুমি আমাকে পতিত ও আপন কুলকেও কলঙ্কিত করিতে উদ্যত হইয়াছ। শকুন্তলা কহিলেন, ভাল, যদি তুমি যথার্থই পরিণয়ে সন্দেহ করিয়া, পরস্ত্রাবোধে পরিগ্রহ করিতে শঙ্কিত হও, কোন অভিজ্ঞান দশাইয়া তোমার আশঙ্কা দূর করিতেছি। রাজা কহিলেন এ উত্তম কম্প; কই কি অভিজ্ঞান দেখাইবে, দেখাও। শকুন্তলা রাজদত্ত অনুরীয় অঞ্চলের কোণে বাঁধিয়া রাখিয়াছিলেন। এক্ষণে ব্যস্ত হইয়া অঙ্গরীয় খুলিতে গিয়া দেখিলেন তঞ্চলের কোণে অঙ্গুরীয় নাই। তখন ম্লানবদনা ও বিষগ্ন হইয়া গোতমীর মুখ পানে চাহিয়া রহিলেন। গোতমী কহিলেন বোধ হয়, আলগা বাধা ছিল, নদীতে স্নান করিবার সময় পড়িয়া গিয়াছে।

 রাজা শুনিয়া ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন “স্ত্রীজাতি অত্যন্ত প্রত্যুৎপন্নমতি” এই যে কথা প্রসিদ্ধ আছে ইহা তাহার এক উত্তম উদাহরণ।

 রাজার এইরুপ ভাবদর্শনে ম্রিয়মাণ হইয়া শকুন্তলা কহি লেন আমি দৈবের প্রতিকূলতা বশতঃ অৱীয় প্রদর্শন বিষয়ে অকৃতকার্য হইলাম বটে; কিন্তু এমন কোন কথা বলিতেছি যে তাহা শুনিলে অবশ্যই তোমার পুর্ব্ব বৃত্তান্ত স্মরণ হইবেক। রাজা কহিলেন এক্ষণে শুনা আবশ্যক; কি বলিয়া আমার প্রীতি জন্মাইতে চাও, বল। শকুন্তলা কহিলেন মনে করিয়া দেখ, এক দিন তুমি ও আমি দুজনে নবমালিকা মণ্ডপে বসিয়া ছিলাম। তোমার হস্তে একটি জলপূর্ণ পন্থপত্রের ঠোঙা ছিল। রাজা