শুনিতে আগ্রহ করে। একবার একজন শ্রোতা রাগ করিয়া বলিয়াছিলেন, “আর তোমার গল্প ভাল লাগে না, তুমি চুপ কর।” কালা ঠাকুর উত্তর করিয়াছিলেন, “তা কেমন করিয়া হবে, এখনও যে এ গল্পের অনেক বাকি।” আমারও সেই ওজর। যদি কেহ পালামৌ পড়িতে অনিচ্ছুক হন, আমি বলিব যে, “তা কেমন করে হবে, এখনও যে পালামৌর অনেক কথা বাকি।”
পালামৌর প্রধান আওলাত মৌয়া গাছ। সাধু ভাষায় বুঝি ইহাকে মধুদ্রুম বলিতে হয়। সাধুদের তৃপ্তির নিমিত্ত সকল কথাই সাধু ভাষায় লেখা উচিত। আমারও তাহা একান্ত যত্ন। কিন্তু মধ্যে মধ্যে বড় গোলে পড়িতে হয়, অন্যকেও গোলে ফেলিতে হয়, এই জন্য এক এক বার ইতস্তত করি। সাধুসঙ্গ আমার অল্প, এই জন্য তাঁহাদের ভাষায় আমার সম্পূর্ণ অধিকার জন্মে নাই। যাঁহাদের সাধুসঙ্গ যথেষ্ট অথবা যাঁহারা অভিধান পড়িয়া নিজে সাধু হইয়াছেন, তাঁহারাও একটু একটু গোলে পড়েন। এই যে এইমাত্র মধুদ্রুম লিখিত হইল, অনেক সাধু ইহার অর্থে আশোকবৃক্ষ বুঝিবেন। অনেক সাধু জীবন্তীবৃক্ষ বুঝিবেন। আবার যে সকল সাধুর গৃহে অভিধান নাই, তাঁহারা হয়ত কিছুই বুঝিবেন না; সাধুদের গৃহিণীরা নাকি সাধুভাষা ব্যবহার করেন না। তাঁহারা বলেন, সাধুভাষা অতি অসম্পন্ন; এই ভাষায় গালি চলে না, ঝগড়া চলে না, মনের অনেক কথা বলা হয় না। যদি এ কথা সত্য হয়, তবে তাঁহারা স্বচ্ছন্দে বলুন, সাধুভাষা গোল্লায় যাক।
মৌয়ার ফুল পালামৌ অঞ্চলে উপাদেয় খাদ্য বলিয়া ব্যবহৃত হইয়া থাকে। হিন্দুস্থানীয়েরা কেহ কেহ সক করিয়া চালভাজার সঙ্গে এই ফুল খাইয়া থাকেন। শুকাইয়া রাখিলে এই ফুল অনেক দিন পর্য্যন্ত থাকে। বর্ষাকালে কোলেরা কেবল এই ফুল খাইয়া দুই তিন মাস