পাতা:পাশাপাশি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভা ভেবেছিল এ প্রশ্নে জব্দ হয়ে যাবে সুনীল । সুনীল সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয়, আছে । কি থিয়োরী ? ভালবাসাটা ঠিক কি জিনিষ অথবা অ-জিনিষ, তার স্বরূপটা কি, সে বিষয়ে কোন থিয়োরি নেই। আজ কেউ বলতে পাবে না। বৈজ্ঞানিকরা তো পারেনই না, কবি লেখকরা ৩। তবু খানিকটা আভাষ দিতে পারেন। কিন্তু ভালোবাসা যাই হোক। যেমন হােক, ভালবাসার ব্যাপারেও সংসারের কতগুলি সাধারণ মূল নিয়ম খাটে। ভালবাসা হবে দুটাে জীবন্ত মানুষের মধ্যে-তারা মেয়ে পুরুষ নাও হতে পারে । কিন্তু মানুষ দুটো হওয়া চাই। বিভা যেন কাঠ হয়ে যায় । খোড়া পায়ের পাতা দুটো আরও ঠেলে দেয় চৌকিটার ভিতরের দিকে । সুনীল বলে, ভালবাসা যখন দু’জনের ব্যাপার, একজন এক নিজের মনে ভালবাসা তৈবী করবে, এটা সম্ভব নয়। দু’জনে মিলে ভালবাসবে। তুমি গল্প উপন্যাসে একজনের যে গোপন নীবুব ভালবাসার কথা পড়, তার মানেটা কি জানো? মানেটা হল দেবতা-ভক্তি, দেবতা-উন্মাদন । দেবতা সাড়াও দেয় না। কিছু গ্ৰহণও করে না । ভক্ত নিজের ভাবে হাসে কঁদে পাগল হয়-পাগল হবার আর কোন রাস্তা নেই, উপায় কি ! ওই অশরীরি দেবতাকে নিয়ে পাগল হওয়ার আরেক নাম একটা জ্যান্ত মানুষকে কিছু জানতে না দিয়ে নিজের মনে গোপনে ভালবাসা । দেবতাদের ভুলে যাও। দেখবে 'এ ভালবাসা ন্যাকামির মত লাগছে । বিভা চুপ করে থাকে। কল্পনা অধীর হয়ে ভাবে, বিভাদি কি বোকা ! এমন সুযোগ পেয়েছে কিন্তু সুনীলকে বুঝিয়ে দেয় না যে তোমার নিয়ম খাটে না আমাদের বেলা । কোন মানেই নেই তোমার নিয়মকানুনের। আমরা অত সব ভেবে কাজ করি না, করতে পারবও না ! 628