[ ২ ]
সবই, নাই কেবল সেকালের পুরাণ কথা। পুরাণ কথা কহিতে আমাদের পূর্ব্বপুরুষেরা ভালবাসিতেন না; ঐ কথাটি কহিতে ঋষিদের মুখ বন্ধ, মুনিদের মুখ বন্ধ, কবিদের মুখ বন্ধ, দর্শনের মুখ বন্ধ, বিজ্ঞানের মুখ বন্ধ, জ্যোতিষের মুখ বন্ধ। সুতরাং আমাদের দেশে পুরাণ কথা যদি শুনিতে চাও তাহা হইলে পাথরকে কথা কহাও, নহিলে ভারতের পুরাণ কাহিনী বলিবার আর লোক নাই।
পাষাণ বড় শক্ত জিনিস, বাহিরও শক্ত ভিতরও শক্ত; কথা কহিতে গেলে শব্দ করিতে হয়। শব্দ ফাঁপা জিনিষ ভিন্ন হয় না, অথচ পাষাণ নিরেট। ন্যায়শাস্ত্রে বলে শব্দ আকাশের গুণ; পাষাণের মধ্যে আকাশ থাকিতে পারে না, সুতরাং পাষাণকে কথা কহান বড় শক্ত ব্যাপার। আকাশ ত আকাশ! পাষাণের উপর বাটালিও চলা কঠিন। সে কালের রাজা রাজড়ারা বাটালি দিয়া কুঁদিয়া পাষাণে দুইচারিটী কথা লিখিয়া রাখিয়া গিয়াছেন, পাষাণ তারই প্রতিধ্বনি করে মাত্র। যখন হাজার হাজার বৎসর পরে বাটালির দাগ মিলাইয়া যাইবে, তখন সে প্রতিধ্বনি বন্ধ হইবে; ইতিমধ্যে পাষাণ তোমায় দু চারিটী কথা শুনাইতে পারিবে। আমাদের দেশময় অনেক অনেক জায়গায় পাষাণে এইরূপ বাটালি কাটা লেখা আছে। সেই গুলি সংগ্রহ করিয়া আমাদের দেশের পুরাণ ইতিহাস।
পাথরের কথা বুঝিবার ক্ষমতা সকলের থাকে না, আমাদের দেশে একেবারেই ছিল না। অনেক যত্নে অনেক পরিশ্রমে প্রায় ৮০ বৎসর পূর্ব্বে প্রিন্সেপ সাহেব পাষাণের ভাষার অক্ষর-পরিচয় আরম্ভ করেন। তারপর কীটো, কনিংহাম, বিউলার প্রভৃতি বড় বড় সাহেবরা সে ভাষা বুঝিতে শিখেন। এখন এদেশের লোক অনেকে পাষাণের কথা কহিতে পারে, পাষাণের কথা বুঝিতে পারে ও লোকজনকে বুঝাইতে পারে। কিন্তু পাষাণ ত অতি অল্প কথা কয়। একখানি শিলাপত্রে একটি মাত্র