পাষাণের কথা
গর্ভগৃহে প্রবেশ করিতেছিলেন কিন্তু সম্রাট কর্তৃক নিষিদ্ধ হইয়া পূর্ব্ববৎ দণ্ডায়মান রহিলেন। ইতিমধ্যে গর্ভগৃহের দ্বারের সম্মুখে অগ্নি প্রজ্বলিত হইল ও কয়েকখণ্ড প্রজ্বলিত কাষ্ঠ গর্ভগৃহের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হইল; পরে বর্ম্মাবৃত পদাতিকগণ প্রজ্বলিত কাষ্ঠখণ্ড লইয়া গর্ভগৃহের মধ্যে প্রবেশ করিল ও সমস্ত গৃহটি পর্য্যটন করিয়া আসিল। মহাস্থবিরগণের পশ্চাতে সম্রাট ও হুবিষ্ক গর্ভগৃহের মধ্যে প্রবেশ করিয়া পাষাণনির্ম্মিত আধারের অর্চ্চনা করিলেন। কম্পিত হস্তে বর্ষীয়ান স্থবিরগণ গুরুভার আধার উন্মোচন করিয়া প্রথমে সুবর্ণনির্ম্মিত ও পরে তন্মধ্যস্থ স্ফাটিক শরীরনিধান উত্তোলন করিলেন। সেই সময় কে যেন আসিয়া শত শত যুদ্ধের রক্তপিপাসু সম্রাটের জানুদ্বয় ভগ্ন করিল, স্ফাটিকাধার উন্মুক্ত হইবামাত্র ভীষণদর্শন নিষ্ঠুর শকসম্রাট ভূমিতে অবলুণ্ঠিত হইলেন। কে জানে সুদূর অতীতে শাক্যরাজকুমারের কি প্রতিভা ছিল, কি মোহিনী শক্তি ছিল, যাহার বলে নির্ম্মম—কঠোর নরঘাতকের হৃদয় দ্রবীভূত হইয়াছিল। সম্রাটের সহিত গর্ভগৃহস্থ ব্যক্তিমাত্রেই শরীরনিধানের সম্মুখে নতশীর্ষ হইলেন; সংক্রামতা ক্রমে গর্ভগৃহের বহির্দ্দেশে ও পরে বেষ্টনীর বহির্দ্দেশে ব্যাপ্ত হইল; আনন্দে ও গর্ব্বে পার্শ্বের মুখ উৎফুল্প হইয়া উঠিল, তিনি তখনও ধনভূতির প্রদত্ত স্ফাটিকাধার হস্তে দণ্ডায়মান ছিলেন। তখন বুঝিলাম, শরীরনিধান রক্ষাকালে বর্ষীয়ান মহাস্থবির কি বলিয়াছিলেন। শকপ্লাবন আসিয়াছে, কপিশা হইতে কামরূপ পর্য্যন্ত বিস্তৃত আর্য্যাবর্ত্তের অধিকাংশ শকজাতির হস্তগত হইয়াছে, প্রাচীন আর্য্যসভ্যতা প্রায় ভাসিয়া গিয়াছিল, কিন্তু যাহা অবশিষ্ট ছিল, তাহারই ফলে আর্য্যাবর্ত্তের পুনরুদ্ধার হইয়াছে। সত্য সত্যই প্রাচীন সভ্যতার সংস্পর্শে আসিয়া মরুবাসী বর্ব্বর শকজাতির
৮৮