পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাষাণের কথা

বহুকাল যাবৎ ভারতবর্ষে বিজাতীয় শত্রু প্রবেশলাভ করে নাই। সুদূর অতীতে শকজাতির আক্রমণ সকলে বিস্মৃত হইয়া গিয়াছিল। শকগণও আর্য্যাবর্ত্তের আচার ব্যবহার, ধর্ম্ম ও ভাষা অবলম্বন করিয়া, আর্য্যজাতির সহিত মিশ্রিত হইয়া গিয়াছিল। কেহই ভাবে নাই যে, প্রবল পরাক্রান্ত গুপ্ত সম্রাটগণের শাসনাধীন আর্য্যাবর্ত্ত কোনও বিদেশীয় জাতি কর্ত্তৃক আক্রান্ত হইবে। মরুপ্রান্তে তুষারময় উত্তরে বর্ব্বরজাতির অশ্বপদশব্দ শ্রুত হইল। সহস্র সহস্র—লক্ষ লক্ষ হূণ অশ্বারোহী মরুভূমি হইতে বহির্গত হইয়া বাহ্লীক ও কপিশা আক্রমণ করিল, ধূলিমুষ্টির ন্যায় সেই প্রবল ঝটিকার সম্মুখে গান্ধারের কুষাণরাজ্য উড়িয়া গেল, গান্ধারের ও উদ্যানে শকজাতীয় সামন্তরাজগণ হূণ আক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টাও করিল না। এই সময়ে পাটলিপুত্রে চন্দ্রগুপ্তের দেহাবসান হইল। প্রৌঢ় কুমারগুপ্তের উপরে এই বিশাল সাম্রাজ্যের শাসনভার অর্পিত হইল। মগধে যখন অভিষেক ক্রিয়া সম্পন্ন হইতেছে, তখন হূণগণ ধীরে ধীরে, পঞ্চনদ, কাশ্মীর, দরদ ও খসদেশ শ্মশানে পরিণত করিতেছে। হূণগণের নাম তোমরা অতি অল্পদিন শুনিয়াছ, কিন্তু কুমারগুপ্তের রাজত্বকালে হূণগণের নাম করিলে ভীতি-বিহ্বলা-গর্ভিণীর গর্ভপাত হইত, স্কন্দগুপ্তের শাসন-কালে তাহাদিগের নাম শুনিলে দেশবিখ্যাত বীরগণ প্রহরণ পরিত্যাগপূর্ব্বক পলায়নপর হইতেন। খর্ব্বাকার, স্থূলদেহ, গুম্ফশ্মশ্রু-বিহীন, পেচকের ন্যায় চক্ষু বিশিষ্ট পশুচর্ম্মাচ্ছাদিত হূণগণকে দেখিলে মনে অত্যন্ত ভয় হইত। সে সময়ে হূণগণের নাম শুনিয়া প্রাচ্য ও প্রতীচ্য উভয় জগতের সকল জাতিকেই শঙ্কিত হইতে হইয়াছিল। শুনিয়াছি, হূণদর্শনে প্রাচীন রোমক সাম্রাজ্যের জনৈক বিখ্যাত ধর্ম্মযাজক বলিয়াছিলেন যে, তাহারা তাতারবাসী নহে—নরকবাসী।

৯৩