পাষাণের কথা
ভাগীরথীতীরে গোবিন্দগুপ্তের ক্ষিপ্রহস্তে সেই অসিচালনা দেখিয়াছিল। কোষমুক্ত অসিহস্তে নিবারণোন্মুখ মহল্লিকাবর্গপরিবৃত হইয়া মেঘমুক্ত ভাস্করের ন্যায় উভয়ে সম্রাটের শয়নকক্ষে প্রবেশ করিলেন; দেখিলেন, বর্ষীয়ান্ সম্রাট্ মহিষীর জন্য মাল্য রচনায় নিযুক্ত আছেন। পুত্রকে ও কনিষ্ঠ ভ্রাতাকে দেখিয়া বৃদ্ধ অতি লজ্জিত হইলেন। কিন্তু তাঁহাকে দেখিয়া গোবিন্দগুপ্তের ধৈর্য্যচুতি হইল। তিনি জ্যেষ্ঠকে সম্বোধন করিয়া পূর্ব্বজীবনের কথা বলিতে লাগিলেন। উন্মত্তের জ্ঞানোদয় হইল না; বৃদ্ধ সম্রাট্ অপরাধ স্বীকার করিয়া কুমার ও মহারাজপুত্ত্রের হস্তে রাজ্যভার অর্পণ করিতে চাহিলেন, কিন্তু তরুণী মহিষীর ভ্রূভঙ্গী দেখিয়া তাহাও করিতে পারিলেন না। অনেক অনুরোধের পর স্কন্দগুপ্ত ও গোবিন্দগুপ্ত মহিষীসমভিব্যাহারে বৃদ্ধ সম্রাট্কে মন্ত্রণাগৃহে আনয়ন করিতে সমর্থ হইলেন। মহিষীর অনুজ্ঞাক্রমে রাজশ্যালক হূণযুদ্ধে সেনাপতি নির্দ্দিষ্ট হইলেন। ইহার অতি অল্পদিন পরেই নিশীথকালে অল্পসংখ্যক হূণ অশ্বারোহী নগর আক্রমণ করিল, হূণনাম শ্রবণমাত্র বৃদ্ধ সম্রাট্ মহিষী ও শিশুপুত্ত্রকে লইয়া হস্তিপৃষ্ঠে নগর ত্যাগ করিলেন। মুষ্টিমেয় হূণ অশ্বারোহী রাত্রিকালে প্রাচীন মহোদয় নগরীকে শ্রীহীন করিয়া গেল, স্তম্ভিত নগরবাসিগণ আত্মরক্ষা করিতেও সমর্থ হইল না।
শরৎকালে একদিন প্রত্যূষে সঙ্ঘারামবাসী ভিক্ষুগণ পরিক্রমণের পথ করিতেছেন, এমন সময়ে কনিষ্কনির্ম্মিত পাষাণাচ্ছাদিত পথে বহুরথচক্রের নিঘোর্ষ শ্রুত হইল। অর্থলোলুপ ভিক্ষুগণ ভাবিলেন যে, নিশ্চয়ই কোন আঢ্য শ্রেষ্ঠী তীর্থযাত্রায় আসিতেছেন। কিন্তু সমাগত ব্যক্তিগণকে দেখিবামাত্র তাঁহাদিগের অর্থলালসা দূর হইয়া গেল, তাঁহারা সভয়ে দেখিলেন যে,
৯৬