পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাষাণের কথা



[ ৯ ]

 বলীবর্দ্দদ্বয়বাহিত রথে বৃদ্ধ সম্রাট্ স্তূপসন্নিধান হইতে পাটলিপুত্রে নীত হইতেছেন। স্কন্ধাবার অন্তর্হিত হইয়াছে, কয়েকজন অশ্বারোহী ধীরে ধীরে শকটের পশ্চাতে চলিতেছে। মহিষী জীর্ণবস্ত্রের ন্যায় বৃদ্ধ পতিকে পরিত্যাগ করিয়া পাটলিপুত্রে রাজদণ্ড অধিকার করিতে গিয়াছেন। কনিষ্কনির্ম্মত পাষাণাচ্ছাদিত পথে ঘর্ঘর শব্দে বন মুখরিত করিয়া ধীর মন্থর গতিতে সম্রাটের রথ চলিয়াছে। তখন সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থল পাটলিপুত্রে মহোৎসবের আয়োজন হইয়াছে; আর কান্যকুব্জে, প্রতিষ্ঠানে ও সুদূর মহাসমুদ্রের তীরবর্ত্তী আনর্ত্তে অসহায় নরনারীর মর্ম্মভেদী আর্ত্তনাদে গগন বিদীর্ণ হইতেছে। শতবর্ষ পরেও সে কথা শ্রবণ করিয়া মাতৃক্রোড়ে ক্রীড়ামত্ত শিশু নিশ্চল হইত। হূণপ্লাবন ত্রিবেণী হইতে সুদূর প্রতীচ্যে রোমক নগরীর তোরণ পর্য্যন্ত উপস্থিত হইয়াছিল। তোরমাণ যখন কান্যকুব্জ ধ্বংস করিতেছেন, তখন হূণবিপ্লবে প্রবীণপ্রতীচ্য জ্ঞানালোক পৃথিবী হইতে লুপ্ত হইবার উপক্রম হইয়াছে। পঙ্গপাল আসিলে যেরূপ শ্যামল তৃণক্ষেত্রে দুর্ব্বাদল পর্য্যন্ত দেখা যায় না, সেইরূপ যে পথে হূণগণ চলিয়া যাইত, সে পথে জীবের চিহ্ণ পর্য্যন্ত লোপ পাইত। উচ্চভূমি হইতে দেখিলে দীর্ঘ কৃষ্ণসর্পের ন্যায় ভস্মীভূত গ্রাম ও নগরশ্রেণী হূণপ্লাবনের পথ নির্দ্দেশ করিয়া দিত। ক্ষুদ্রাকার, বৃহৎশীর্ষ, ক্ষুদ্রনাসিক, মলিন, শ্বেতবর্ণ হূণ অশ্বারোহীকে দেখিবা মাত্র উত্তরাপথবাসিগণ গৃহ পরিত্যাগ করিয়া অরণ্যে আশ্রয় গ্রহণ করিত, কালান্তকস্বরূপ হূণগণ অরণ্য বেষ্টন করিয়া তাহাতে অগ্নিসংযোগ করিত

১০১