পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাষাণের কথা

ও পলায়নপর নরনারীগণকে দূর হইতে বর্শা বা শরবিদ্ধ করিত। নগরাক্রমণ করিলেই ঝটিকাহত সমুদ্রতরঙ্গের ন্যায় হূণগণ দুর্গপ্রাকার বা দুর্গপ্রাচীর অতিক্রম করিয়া অসহায় নাগরিকগণের উপর পতিত হইত, এক সময়ে নগরের নানা স্থানে অগ্নিসংযোগ করিত; তৈলসিক্ত বস্ত্রে জড়িত জীবিত শিশুর গাত্রে অগ্নিসংযোগ করিয়া রাত্রিকালে আলোকের কার্য্য নির্ব্বাহ করিত; মাতার সম্মুখে শিশুকে ঊর্দ্ধে নিক্ষেপ করিয়া শাণিত তরবারির উপরে ধারণ করিত, হতভাগ্য শিশুর দ্বিখণ্ডিতদেহ ধূলিতে লুণ্ঠিত হইত। বৃদ্ধ সম্রাট্ অত্যন্ত পীড়িত। গোবিন্দগুপ্ত বহু কষ্টে মগধের সীমান্ত রক্ষা করিতেছেন। সাম্রাজ্যের অন্যান্য প্রদেশ সংরক্ষণ অসম্ভব। এই সময়ে পুরগুপ্তের নামে তরুণী মহাদেবী সাম্রাজ্যের শাসনভার গ্রহণ করিলেন; বৃদ্ধ সচিব দামোদর শর্ম্মার সকল আশার অবসান হইল।

 সম্রাটের শিবির স্তূপসান্নিধ্য পরিত্যাগ করিলে ক্রমশঃ দুই একজন ভিক্ষু সঙ্ঘারামে আসিয়া বাস করিল। ইহারা সকলেই নিরক্ষর, বুদ্ধ অপেক্ষা উদরের প্রতি অধিক ভক্তিপরায়ণ, নির্ব্বাণ লাভাপেক্ষা তরুণী লাভের জন্য অধিক লোলুপ। ইহারা অর্থের জন্য নিরীহ তীর্থযাত্রিগণকে উৎপীড়িত করিত। ক্রমে ইহাদিগের ভয়ে তীর্থবাত্রিগণ আর স্তূপসান্নিধ্যে আসিতে চাহিত না। বেষ্টনী পরিক্রমণের পথ ও প্রাচীন গর্ভগৃহের দ্বার বনময় হইয়া উঠিল। একদিন নিশীথে দূরে বহু অশ্বপদশব্দ শ্রুত হইল। শব্দ ক্রমশঃ নিকটবর্ত্তী হইলে দৃষ্ট হইল, হূণসৈন্য দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ হইতে সাম্রাজ্যের সৈনিকদিগকে ধীরে ধীরে স্তূপাভিমুখে তাড়িত করিয়া আনিতেছে। পরদিন প্রভাতে সম্রাটের সৈনিকগণ ভিক্ষুগণকে সঙ্ঘারাম হইতে দূর করিয়া

১০২