পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাষাণের কথা

তক্ষশিলার আবালবৃদ্ধবনিতা হূণগণ কর্ত্তৃক নিহত হইয়াছে। আকুল হইয়া সিংহদত্তকে ডাকিলাম। স্তূপ ধ্বংস করিয়া অগ্নিরাশি অরণ্যের চতুষ্পার্শ্বে ধাবিত হইয়াছে, মণ্ডলাকার ধূমরাশি মেঘরাজ্যে উত্থিত হইতেছে; দেখিলাম, যেন তেজঃস্নাত দিব্যদেহ সিংহদত্ত সহাস্য বদনে দিবাকরের রাজ্য হইতে অবতরণ করিতেছেন। সিংহদত্তের ছায়া স্তূপের ধ্বংসাবশেষের চতুষ্পার্শ্বে ভ্রমণ করিতে লাগিল, দারুণ যন্ত্রণায় আকুল পাষাণকণাগুলিকে যেন বলিতে লাগিল “যাহার অস্থির উপরে এই স্তূপ নির্ম্মিত হইয়াছিল, তিনি যে স্থানে আসিয়াছেন আমিও সেই স্থানে আসিয়াছি। পাটলিপুত্রবাসী মহাস্থবির, ধনভূতি, অপূর্ব্বশিল্পদক্ষ যবনশিল্পিগণও সেইস্থানে আসিয়াছেন। তথায় ধর্ম্ম, কর্ম্ম, ব্রাহ্মণ, শ্রমণ, যতি বা ভিক্ষু, স্তূপ বা মন্দির কাহারও আবশ্যকতা নাই। তক্ষশিলার নাগরিকগণ চিরদিনের জন্য তক্ষশিলা পরিত্যাগ করিয়াছে। ধনভূতির নগরবাসিগণ তাহার শত শত বর্ষ পূর্ব্বে তাহাদিগের নগর পরিত্যাগ করিয়া গিয়াছে। আমি দর্প করিয়া বলিয়াছিলাম যে, নগরবাসিগণ তথাগতের ধর্ম্মে যদি কখনও বীতশ্রদ্ধ হয় তাহা হইলে তথাগতের শরীরনিধান যেন তক্ষশিলার মহাবিহারের অধ্যক্ষকে প্রত্যর্পণ করা হয়। আমার দর্প চূর্ণ হইয়াছে। ধনভূতির নগর তক্ষশিলার পূর্ব্বে ধ্বংস হইয়াছে বটে, কিন্তু তথাগতের শরীরনিধান সমভাবে পূজিত হইয়া আসিয়াছে। স্তূপ যে দিন ধ্বংস হইল, সে দিন কিন্তু আর ভক্ষশিলায় তথাগতের শরীরনিধান গ্রহণ করিতে জনমাত্রও নাই। অশরীরী সিংহদত্ত ধূম, ধূলি ও সন্ধ্যার অন্ধকারে মিলাইয়া গেলেন। তখন দূরে পর্ব্বতের সানুদেশে প্রজ্বলিত বনরাজি অমানিশার ঘোর-অন্ধকার নষ্ট করিবার চেষ্টা করিতেছিল।

১০৭