পাষাণের কথা
[ ১০ ]
স্কন্দগুপ্ত যখন সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষের উপর সিংহাসন স্থাপন করিবার চেষ্টা করিতেছিলেন, তখন ধীরে ধীরে আমাদিগের ধ্বংসাবশেষের উপর নবীন তৃণরাজি অধিকার বিস্তার করিতেছিল। বর্ষার প্রারম্ভ হইতে নব দুর্ব্বাদল আমাদিগের ধ্বংসাবশেষের উপরিভাগ আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিল, স্থানে স্থানে অশ্বত্থ, বট প্রভৃতি বৃক্ষ জন্মিতেছে, দেখিতে পাইলাম; কারণ, সুবৃহৎ স্তূপ ধ্বস্ত হইলেও আমি তখনও উচ্চশীর্ষ ছিলাম। বর্ষা অতীত হইলে দেখিলাম, স্তূপ ও বেষ্টনী নবদূর্ব্বাদলে আচ্ছাদিত হইয়াছে; বিশাল স্তূপের অস্তিত্বের সামান্য চিহ্ণমাত্র বর্ত্তমান, স্থানে স্থানে কেবল মাংসবিহীন কঙ্কালের ন্যায় বেষ্টনীর স্তম্ভগুলি দণ্ডায়মান। যত দূর দৃষ্ট হয়, তত দূর শ্যামল তৃণক্ষেত্র ব্যতীত আর কিছুই নয়নগোচর হইতেছিল না; বোধ হইল, আটবিক প্রদেশ পুনরায় জনশূন্য হইয়াছে। দূরে উচ্চ মৃৎপিণ্ড লক্ষিত হইতেছিল; অনুমানে বুঝিলাম, তাহাই ধনভূতির নগরের ধ্বংসাবশেষ। সম্মুখে মৃৎপিণ্ডের উপর দুইটি ক্ষুদ্রতর মৃৎপিণ্ড প্রাচীন নগর তোরণের অবস্থানের পরিচয় দিতেছিল। হেমন্তের মধ্যভাগে একদিন প্রভাতে আমাদিগের উত্তরে মনুষ্যপদশব্দ শ্রুত হইল, যেন কে ধীরে ধীরে স্তূপের দিকে অগ্রসর হইতেছে। স্তূপের দিকেই বলিলাম। তুমি হয়ত বলিবে, স্তূপের অস্তিত্বলোপ হইয়াছে, কিন্তু সে কথা স্বীকার করিতে আমি অত্যন্ত বেদনা অনুভব করি। আমি বলিব, স্তূপ এখনও বর্ত্তমান আছে—অশোকের ন্যায় বা কনিষ্কের ন্যায় সদ্ধর্ম্মানুরাগী কোন সম্রাট আসিয়া ধ্বংসাবশেষের
১১২