পাষাণের কথা
ধর্ম্মাবলম্বী যুবকও ব্রাহ্মণদ্বেষী হইয়া উঠিলেন। উভয়ে এইরূপে আমাদিগের নিকট দীর্ঘকাল অতিবাহিত করিয়ছিলেন। এক দিন প্রভাতে যুবক বুঝিতে পারিলেন যে, তাঁহাদিগের বিচ্ছেদের সময় সন্নিকট হইয়াছে; স্থবির শীঘ্রই জীর্ণ দেহ পরিত্যাগ করিয়া নূতনের অন্বেষণে মহাযাত্রা করিবেন। যুবকের হৃদয় চঞ্চল হইয়া উঠিল। সে দিন আসিল; বৃদ্ধের দুর্ব্বল হৃৎপিণ্ড বহু চেষ্টা করিয়াও পর্য্যাপ্ত পরিমাণ শ্বাস আহরণে অসমর্থ হইল, জীর্ণ পঞ্জর যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াও হৃৎপিণ্ডের সহায়তা করিতে সমর্থ হইল না; ধীরে ধীরে বৃদ্ধের ক্লান্ত দেহ সুষুপ্তির আশ্রয় গ্রহণ করিল। যুবক শূন্য হৃদয়ে শূন্য দেহের পার্শ্বে বসিয়া মহাশূন্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে করিতে দিনপাত করিলেন। শূন্য ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বৃদ্ধের লঘুভার দেহ মৃত্তিকায় প্রোথিত করিয়া ধীরে ধীরে অতি সন্তর্পণে জীর্ণ পর্ণকুটীরের জীর্ণ দ্বার অর্গলবদ্ধ করিয়া যুবক স্তূপসন্নিধান হইতে প্রস্থান করিলেন।
তাহার পর বহুদিন মনুষ্য দেখি নাই। স্তূপের ধ্বংসাবশেষ লতাগুল্মে আচ্ছন্ন হইয়া গেল, গ্রীষ্মের পর গ্রীষ্মে প্রবল বায়ু জীর্ণ কুটীরের আচ্ছাদনতৃণ হরণ করিয়া লইয়া গিয়াছে, বর্ষার পর বর্ষা আসিয়া কুটীরের প্রাচীন কাষ্ঠদণ্ডগুলিকে প্রাচীনতর করিয়াছে, বসন্তে কুটীরের জীর্ণপঞ্জর শ্যামল তৃণে ও নবীন লতিকায় আচ্ছন্ন হইয়াছে, পুনরায় গ্রীষ্মে তৃণ, পত্র, পুষ্প শুষ্ক হইয়া ধূলিতে পরিণত হইয়াছে। স্তূপের যে স্তম্ভগুলি তখনও পর্য্যন্ত দণ্ডায়মান ছিল মনুষ্যহস্তে মার্জ্জনার অভাবে সেগুলি পিচ্ছিল শৈবালময় হইয়া উঠিয়াছে। সেই সময়ে বৃদ্ধের সমাধির উপরে একটি অশ্বত্থ বৃক্ষ জন্মগ্রহণ করিয়ছিল। কালক্রমে বয়োবৃদ্ধির সহিত বৃক্ষটি দীর্ঘাকার প্রাপ্ত হইলে তাহার চতুঃপার্শ্বস্থ ভূখণ্ড
১২৬