মধ্যাহ্নে প্রখর সূর্য্যতপ্ত বায়ু আমাকে অপর কতকগুলি বালুকণার সহিত সমুদ্রবক্ষে নিক্ষেপ করিয়াছিল। সে দিন যত দূরে আসিয়া পড়িয়াছিলাম, জীবনে আর কোন দিন তত দূর আসিতে পারি নাই। আমার জীবনযাত্রায় সেই প্রথম পাদক্ষেপ। সে দিন বুঝিতে পারি নাই যে, পরে অতীতকালের সাক্ষিস্বরূপ বহুযুগের ইতিহাস বহন করিয়া আমাকে সংগ্রহশালায় আবদ্ধ হইয়া থাকিতে হইবে। সে দিন যে স্থানে আসিয়াছিলাম, সে স্থান হইতে সমুদ্রের জল সরে না, সুতরাং শৈশবের আবাসভূমি আর কখনও দেখি নাই।
সমুদ্রগর্ভে অপরাপর বালুকণার সহিত বহুকাল বাস করিয়াছি; কত অপরূপ জলজন্তু আমাদিগের বক্ষের উপর দিয়া চলিয়া যাইত। আমরা তাহাদিগের জন্মমৃত্যু দেখিতাম। বালুকাময় সমুদ্রগর্ভে তাহাদিগের জন্ম হইত। তাহারা আমরণ সেই বালুকাক্ষেত্রেই বাস করিত। জীবনান্তে তাহাদিগের অস্থিগুলি শুভ্র বালুকাক্ষেত্রটিকে শুভ্রতর করিয়া তুলিত। সেই সকল অস্থি তোমাদিগের অতীত জীববিদ্যার মূল। তোমরা সেই যুগের কোন জীবেরই সমগ্র কঙ্কাল সংগ্রহ করিতে পার নাই, একখানি দুইখানি অস্থি লইয়া তোমরা অতীত যুগের জীবনের চিত্র অঙ্কিত করিতে চাহ; কিন্তু তাহা হয় না। অতীতের সাক্ষী, আমি—সেই সকল জীব দেখিয়াছি। আমি তাহাদিগকে স্পর্শ করিয়াছি; তাহাদিগের জীবনের প্রারম্ভ হইতে তাহাদিগের চৈতন্যের শেষ সীমা পর্য্যন্ত তাহাদিগের গতিবিধি লক্ষ্য করিয়াছি; জীবনান্তে বহুযুগ তাহাদিগের অস্থিনিচয় বক্ষে ধারণ করিয়াছি—আমি বলিতেছি, তাহা হয় না। তোমরা অতীত যুগের জীবন সমূহের যে চিত্রাবলি রাখিয়াছ তাহা হাস্যোদ্দীপক। বালুকণার যদি উচ্চহাস্য করিবার ক্ষমতা থাকিত, তাহা হইলে আমার