পাষাণের কথা
করিযূথের আহারান্বেষণে যথেচ্ছ পাদচারণের শব্দ নহে, মনুষ্যকর্ত্তৃক চালিত হস্তীর ধীর—সমভাবে পাদক্ষেপণের শব্দ। শব্দ শ্রুতিগোচর হইলে শার্দ্দূল অস্থির হইয়া উঠিল। তখন তাহার দ্রুতবেগে পলায়নের ক্ষমতা নাই; অনুমান হইল, বহুক্ষণ হইতে এবং বহুদূর হইতে কেহ যেন তাহাকে তাড়না করিয়া আনিয়াছে। বহু কষ্টে ব্যাস্ত্রটি নিকটবর্ত্তী বেতসকুঞ্জে আশ্রয় গ্রহণ করিল এবং তাহার পরক্ষণেই বনমধ্য হইতে লৌহবর্ম্মাবৃত একটি বৃহৎ হস্তী নির্গত হইল। তাহার স্বন্ধে হস্তিপক ও পৃষ্ঠে যোদ্ধৃবেশে জনৈক বৃদ্ধ ও একটি বালক। আঘ্রাণে ব্যাঘ্রের অবস্থান অবগত হইয়া লৌহমণ্ডিত হস্তী ধীরে ধীরে বেতসবনের সম্মুখে দণ্ডায়মান হইল। বেতস লতার একটি অঙ্গুলি ঈষৎ কম্পিত হইল। অমনই বালকের হস্তনিক্ষিপ্ত শর ব্যাঘ্রের কণ্ঠে আমূল বিদ্ধ হইল। আর্ত্তনাদে বনভূমি বিকম্পিত করিয়া, এক লম্ফে ব্যাঘ্র বেতসকুঞ্জ উত্তীর্ণ হইয়া অশ্বত্থবৃক্ষতলে পতিত হইল, ও মুহূর্ত্ত মধ্যে প্রাণত্যাগ করিল। হস্তিপক হস্তিকে উপবেশন করিতে আদেশ করিল; কিন্তু বেত্রলতায় আচ্ছাদিত স্তূপবেষ্টনীর ভগ্ন স্তম্ভে আঘাত প্রাপ্ত হইয়া হস্তী উপবেশন করিতে পারিল না—কিয়দ্দূর অগ্রসর হইয়া উপবেশন করিল। বৃদ্ধ ও বালক হস্তিপৃষ্ঠ হইতে অবতরণ করিয়া মৃত ব্যাঘ্রের নিকঠ গমন করিলেন। উল্লাসে বালক শার্দ্দূলের দীর্ঘদেহ হস্তীর নিকট আনয়ন করিবার উপক্রম করিল; কিন্তু বৃদ্ধ তাহাকে নিষেধ করিলেন। বালকের উল্লাস প্রশমিত হইল না; ব্যাঘ্রের দেহ লইয়া বালক ক্রীড়া করিতে আরম্ভ করিল। তাহার জীবনে এই প্রথম শার্দ্দূল হনন। সে দেখিতেছিল, তাহার পর ব্যাঘ্রের কণ্ঠে আমূল বিদ্ধ হইয়া হৃৎপিণ্ড ভেদ করিয়াছে। বৃদ্ধ তখন পশ্চাৎপদ হইয়া বেতসকুঞ্জে বারণের পদস্খলনের কারণ অনুসন্ধান করিতে-
১২৮