বর্ণ প্রস্তরনির্ম্মিত পিষ্টকাকৃতি চারিটি মন্দির নির্ম্মিত হইল। ক্রমে নানাবিধ মূর্ত্তি নগর হইতে আসিতে লাগিল এবং স্তূপের পার্শ্বে নানা স্থানে ক্ষুদ্র মন্দিরসমূহে স্থাপিত হইতে লাগিল।
শ্রমজীবিগণ বহুদিন সংস্কার ও নির্ম্মাণ কার্য্যে ব্যাপৃত ছিল। তাহাদিগের নিকট হইতে অনেক কথা শুনিয়াছিলাম। যশোধর্ম্ম একজন সামান্য পদাতিক সৈন্য ছিলেন; স্কন্দগুপ্তের অধীনে তরুণ বয়সে যুদ্ধব্যবসায়ে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। তরুণসৈনিক বৃদ্ধ সম্রাটের পার্শ্বে থাকিয়া দীর্ঘকালব্যাপী হূণযুদ্ধে বহু স্থানে অসমসাহস প্রদর্শন করিয়াছিলেন। শত শত যুদ্ধে বৃদ্ধ সম্রাটের প্রাণরক্ষা করিয়া অবশেষে প্রতিষ্ঠানের মহাযুদ্ধে সম্রাট নিহত হইলে তিনি বনরাসে গমন করিয়াছিলেন। তখন বুঝিলাম বৃদ্ধ কে; বেতসকুঞ্জে ভগ্ন পাষাণস্তম্ভ কেন তাঁহার চিত্তাকর্ষণ করিয়াছিল; মৃগয়া পরিত্যাগ করিয়া—একমাত্র পুত্ত্রের আহ্বানে বধির হইয়া বৃদ্ধ সম্রাট কণ্টকাঘাতে ক্ষত বিক্ষত হইয়া কি নিমিত্ত বেতসবনে চিত্রার্পিতের ন্যায় দণ্ডায়মান ছিলেন? সেই স্তম্ভপার্শ্বে বৃদ্ধ স্থবির সমাহিত। পর্ণকুটীরের পল্লবিত দণ্ডে আশ্রয় গ্রহণ করিয়া বেতস লতা কুঞ্জে পরিণত হইয়াছিল তাহা বৃদ্ধ দর্শনমাত্রেই বুঝিতে পারিয়াছিলেন, জীবনদাতা বৃদ্ধ স্থবিরের কথা সহসা মনে উদিত হইয়া বৃদ্ধকে পাষাণবৎ নিশ্চল করিয়াছিল। বৃদ্ধের মৃত্যুর পর লোকালয়ে প্রত্যাবর্ত্তন করিয়া যুবক তাহার জীবনদাতার কথা বিস্মৃত হইয়াছিলেন। বহুকালপরে—জীবনের শেষ সীমায় দণ্ডায়মান হইয়া রক্তবর্ণ পাষাণের স্তম্ভদর্শনে সম্রাটের মনে পরমোপকারী বৌদ্ধ স্থবিরের কথা পুনরায় উদিত হইয়াছিল। বুঝিলাম, বৃদ্ধ সম্রাট গুরুর আদেশে স্তূপ সংস্কার করিতেছেন, সদ্ধর্ম্মের প্রতি শ্রদ্ধান্বিত হইয়া সম্রাট এই কার্য্যে প্রবৃত্ত হয়েন নাই, কৃতজ্ঞতায়
১৩৩