[ ১২ ]
তাহার পরদিন মনুষ্যজাতির প্রতি ও সদ্ধর্ম্মের প্রতি আমার ঘৃণা জন্মিয়াছিল। তোমাকে পূর্ব্বে বলিয়াছি, মানবকে কত ভালবাসি, মনুষ্য-সংসর্গ কত ভালবাসিতাম, আজীবন মানবকরস্পর্শে চালিত করিয়া আসিয়াছি, আজীবন যাহা কিছু নূতন দেখিয়াছি তাহাও মানবের কৃপায়; স্মৃতিশক্তিহীন, চলচ্ছক্তিহীন জীবনে যতটুকু স্থান ও অবস্থার পরিবর্ত্তন হইয়াছে তাহাও মানবের জন্য। তাহাই নিশ্চল পাষাণের মানবের প্রতি আকর্ষণের হেতু ও তাহাই আমাদের মানবদর্শনলালসার মূল। মনুষ্যদর্শন করিবার জন্য উৎসুক চিত্তে বর্ষের পর বর্ষ অতিবাহিত করিয়াছি; যখন মনুষ্য-সংসর্গের পরিবর্ত্তে নিবিড়বনবেষ্টিত হইয়া অসংখ্য অগণিত বৎসর যাপন করিয়াছি, তখনও জীবনের একমাত্র লালসা—একমাত্র উদ্দেশ্য—মানবসমাজের সংস্পর্শলাভ ব্যতীত আর কিছুই ছিল না। জীবনে মানবসংস্পর্শের প্রথম দিনে মানবের নগরোপকণ্ঠে আসিয়া যে সৌন্দর্য্য দেখিয়াছিলাম, কতদিন তোমাকে বলিয়াছি, সেরূপ সৌন্দর্য্য আর দেখি নাই, আর কখনও দেখিবার আশা নাই। কিন্তু এক দিনে সেই মানবের প্রতি ও মানবসংস্পর্শের প্রতি এরূপ দারুণ ঘৃণা জন্মিয়াছিল যে, এখনও তাহা প্রশমিত হয় নাই। মানবের প্রারম্ভ হইতে মানবকে দেখিতেছি, মানবকে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখিয়াছি, মানবকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখিয়াছি, এখন ঘৃণা ও শ্রদ্ধা অতিক্রম করিয়া মানবকে দেখিতেছি; কিন্তু যশোধর্ম্মদেবের স্তূপার্চ্চনার দিন মানবের যে রূপ দেখিয়াছি সে রূপ আর কখনও আমাদিগের গোচর হয় নাই। মানবের প্রারম্ভ দেখিয়াছি, বলবীর্য্যসম্পন্ন, দীর্ঘাবয়ব, সরলচিত্ত, আর তখন
১৩৫