পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাষাণের কথা

করিয়া দেখ, যাহাকে আর্য্যাবর্ত্তে সদ্ধর্ম্ম বলিত, তাহা নাই, তাহার পরিবর্ত্তে যাহা আছে তাহা তোমরা চিনিতে পরিবে না। স্বেচ্ছাচারীর অদম্য কাম ও অসহ্য লালসা সদ্ধর্ম্মের সহিত দেশে ও বিদেশে যাহা মিশ্রিত করিয়াছে তাহাতে সদ্ধর্ম্মে সত্যের পরিবর্ত্তে অসত্য প্রবেশ করিয়াছে। যাহা সত্য, তাহা সরল ও সহজবোধগম্য, এক সত্যের সাহায্যে অপরের সাহায্য লাভ করা যায়, তাহা স্থায়ী হয়। কিন্তু একবার যদি অসত্যের আশ্রয় গ্রহণ করিতে হয়, তাহা হইলে ভবিষ্যতে তদ্ব্যতীত আর পন্থা থাকে না; একটি মিথ্যা কথা প্রমাণ করিতে হইলে যেমন শত শত মিথ্যা কথার অবতরণা করিতে হয়, সত্যের সহিত অসত্য মিশ্রিত হইলে তেমনই অসত্যেরই প্রাদুর্ভাব হয়, সত্য দূরীভূত হইয়া যায়। চাহিয়া দেখ কি হইয়াছে, উত্তরমেরুপ্রান্তে চিরতুষারমণ্ডিত সমুদ্রকুলবাসী অসভ্য বর্ব্বরগণও সদ্ধর্ম্মের আশ্রয়ে আসিয়াছে। কিন্তু তাহাদিগের সদ্ধর্ম্ম কিরূপ? তাহাদিগের শ্রমণগণ দন্তহীন মৎস্যের পূজায় দিবস অতিবাহিত করিয়া থাকে ও সুরাপানে উন্মত্ত হইয়া রজনীযাপন করে। দূরে যাও, মেরুবাসী মৎস্যভূক বামনগণও সদ্ধর্ম্মের প্রতি অনুরাগী, তাহাদিগেরও শ্রমণ আছে, তাহারা মৎস্যের আকাঙ্ক্ষায় সমুদ্রের পূজা করিয়া থাকে, বহু শতাব্দীর মধ্যে ধর্ম্ম, বুদ্ধ বা সঙ্ঘের নাম শ্রবণ করে নাই। উত্তরকুরুর সুদীর্ঘ মরুপ্রান্তে যে সুসভ্য জাতি বাস করে তাহারাও বৌদ্ধ; তাহাদের ভিক্ষু ও শ্রমণগণ কাষায় পরিধান করিয়া থাকেন, তাহাদিগের শত শত বিহার ও সঙ্ঘারাম আছে; কিন্তু অনুসন্ধান করিয়া দেখিও, তাহাদিগের মধ্যে কয়জন গৌতমবুদ্ধের নাম শ্রবণ করিয়াছে। তাহাদিগের ভিক্ষুগণ দারপরিগ্রহ করিয়া সঙ্ঘারামে গৃহস্থাশ্রম স্থাপিত করিয়াছে, হলকর্ষণ বা বাণিজ্য তাহাদিগের নিকট দোষাবহ নহে।

১৩৭