পাষাণের কথা
আর্য্যাবর্ত্তের নিকটে আগমন কর; চাহিয়া দেখ, আর্য্যাবর্ত্তের প্রান্তে কি হইতেছে! সদ্ধর্ম্ম আছে, বুদ্ধ আছে, কিন্তু সার বস্তুর অভাব। এক বুদ্ধের স্থানে চতুর্বিংশতি সহস্র বুদ্ধের আবির্ভাব হইয়াছে; ধ্যানীবুদ্ধ, মানসীবুদ্ধ ও বোধিসত্ত্বগণপরিবৃত অন্তসারশূন্য গৌতম বুদ্ধের নাম এখনও বিদ্যমান রহিয়াছে। শত শত শক্তিপরিবেষ্টিত বোধিসত্ত্বগণ সর্ব্বদাই বলিতেছেন, ইন্দ্রিয়য়লালসাপরিতৃপ্তি ব্যতীত নির্ব্বাণলাভের উপায় নাই। বিত্তশালী সঙ্ঘারামসমূহে সুরার সহিত শক্তির উপাসনা ব্যতীত অপর কোন কথা শুনিতে পাইবে না। যে সুবর্ণভূমি হইতে ব্রাহ্মণ্যধর্ম্ম সদ্ধর্ম্ম কর্ত্তৃক বিতাড়িত হইয়াছিল, সেই সুবর্ণভূমিতে সদ্ধর্ম্মের কি অবস্থা হইয়াছে পরীক্ষা করিয়া দেখ! সুবর্ণব্রীহিমণ্ডিত কাষ্ঠনির্ম্মিত বুদ্ধমূর্ত্তির সম্মুখে প্রতি দিন বসালিপ্ত অন্নসংস্থাপন করাই বৌদ্ধের একমাত্র কর্ম্ম। প্রব্রজ্যা গ্রহণের নাম এখনও বর্ত্তমান আছে বটে, কিন্তু তাহা নামেই পর্য্যবসিত হইয়াছে। শিশুগণ প্রব্রজ্যা গ্রহণ করিয়া, প্রভাতে চীরধারণ করে ও সন্ধ্যাকালে তাহা দূরে নিক্ষেপ করে, ইহার কারণ কি বুঝিতে পারিয়াছ? সদ্ধর্ম্মে যখন অবনতির সূত্রপাত হইল, তখন সমগ্র আর্য্যাবর্ত্তবাসী ভিক্ষুসঙ্ঘ উন্নতির কি উপায় উদ্ভাবন করিয়াছিলেন? তাঁহারা দেখিলেন, রাজশ্রীর আশ্রয় লাভ করিয়া ব্রাহ্মণগণ ধর্ম্মমতে কালানুযায়ী পরিবর্ত্তন করিতেছেন, তদনুকরণে তাঁহারাও তথাগতের সরল ধর্ম্ম পরিবর্ত্তনে প্রবৃত্ত হইলেন। তাহাতে শাক্যরাজকুমারের সরল ধর্ম্মের সহজাত মাধুর্য্য নষ্ট হইল। যে আকর্ষণে মুগ্ধ হইয়া জনসমাজ ব্রাহ্মণ্য ধর্ম্মের বাহ্যাড়ম্বর ও বাক্যমালা পরিত্যাগ করিয়া শান্তিলাভের আকাঙ্ক্ষায় তথাগতের আশ্রয় গ্রহণ করিতে আসিত, তাহা আর রহিল না। তখন আকর্ষণ করিবার নূতন উপায় আবশ্যক হইল, সদ্ধর্ম্মে
১৩৮