পাষাণের কথা
আসিয়া যে স্থানে আশ্রয় দেখিল সেই স্থানেই অধিবাসিগণকে নিষ্কাশিত করিয়া তাহা অধিকার করিল। ভিক্ষু ও শ্রমণগণ আশ্রয়বিহীন হইয়া রাত্রিযাপন করিলেন, কিন্তু সৈনিকগণের প্রতি অত্যন্ত রিরক্ত হইলেও প্রকাশ্যে কোন কথা বলিতে সাহস করিলেন না। রাত্রি অতিবাহিত হইলে পটমণ্ডপ স্থাপিত হইল, সেনাদল শিবিরে চলিয়া গেল, কুটীর ও গৃহসমূহের অধিবাসিগণ স্ব স্ব স্থানে প্রত্যাবর্ত্তন করিল।
ক্রমে প্রাচীন স্তূপের বেষ্টনীর বহির্ভাগে কতকগুলি বিপণী স্থাপিত হইয়াছে, তাহাতে আহার্য্য, বস্ত্রাদি ও সুরা বিক্রীত হইয়াছে। বিপণীর চতুষ্পার্শ্বে সেনাদলের পার্শ্বচারিণীদিগের পর্ণকুটীর নির্ম্মিত হইয়াছে। বিপণী হইতে কলসের পর কলস সুরা এই কুটীরসমূহমধ্যে আনীত হইতেছে; কিন্তু বিক্রেতা সকলের নিকট মূল্য পাইতেছে না। পুরাতন পাষাণখণ্ডসমূহে নির্ম্মিত নূতন সঙ্ঘারামে ভিক্ষুগণ কাষায়ের পরিবর্ত্তে রক্তবর্ণ বস্ত্র পরিধান করিয়াছেন। সঙ্ঘারামেও ক্ষুদ্র বৃহৎ নানাবিধ আকারের মৃন্ময় কলস আনীত হইতেছে, ভিক্ষু ও শ্রমণগণ সাধনার জন্য আবশ্যকানুযায়ী বিভিন্ন প্রকারের মধু আনয়ন করিতে অনুচরবর্গকে আদেশ প্রদান করিতেছেন। বিভিন্ন আকারের ও বিভিন্ন বর্ণের কলসের মুখে পুষ্প বা ফলের আচ্ছাদন রহিয়াছে, কোন কলসের মুখে কদম্ব বা যবশীর্ষ, কোন কলসের মুখে প্রফুল্ল কমল বা মধূপপুষ্প, কাহারও মুখে আম্রশাখা এবং কাহারও মুথে বা পক্ক কদলী। রজনীসমাগমে মধুর প্রয়োজনের আধিক্য হইত, বরবর্ণিনী শক্তিগণের সাহায্যে সদ্ধর্ম্মের উদ্দেশ্যে নিবেদিত কলস কলস মধু প্রতি রজনীতে যথাস্থানে প্রেরিত ও উপস্থিত হইত। বুদ্ধ বা বোধিসত্ত্বগণের নাম করিলেই হইত। সময়ে সময়ে তাহার আবশ্যকও হইত না, সঙ্ঘারামবাসী অনেকেই বুদ্ধ বা বোধিসত্ত্বনামে অভিহিত হইতেন।
১৪০