পাষাণের কথা
অভাব ছিল না। সম্রাটের সহিত যে কয়জন চীরধারী ভিক্ষু আসিয়াছিলেন তাঁহারা সমাগত বুদ্ধ বা বোধিসত্ত্বগণের সংস্পর্শে আসিতেন না, দূরে বনমধ্যে পর্ণকুটীরে দিনযাপন করিতেন। বুদ্ধ বা বোধিসত্ত্বগণ ইহাঁদিগকে বিশেষ শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখিতেন না। একদিন শুনিলাম, সম্রাট পার্শ্বচরগণ পরিবৃত হইয়া উপাসনার জন্য স্তূপে আসিবেন। স্তূপ ও বেষ্টনী পরিষ্কৃত হইল; সজ্জারও অভাব হইল না। শুনিলাম, সেই দিন উপাসনার জন্য নাগরিকগণও স্তূপসন্নিধানে আসিয়া উপস্থিত হইবে, কিন্তু উৎসব দর্শনে আমাদিগের কিছুমাত্র আকাঙ্ক্ষা ছিল না।
নূতন উৎসবে বিশেষত্ব ছিল, কিন্তু তথাপি আমরা বিশেষভাবে সন্তুষ্ট হই নাই! যে দিন সম্রাট স্তূপার্চ্চনা করিতে আসিলেন সে দিন সূর্য্যোদয়ের পূর্ব্ব হইতে বুদ্ধ ও বোধিসত্ত্বমণ্ডলী স্তূপ ও বেষ্টনী অধিকার করিয়া বসিলেন। নানা স্থানে শক্তিমণ্ডলী পরিবেষ্টিত হইয়া ভূতলে নানাবর্ণে রঞ্জিত চক্রাঙ্কন করিয়া তন্মধ্যে ঊষাকাল হইতে ইঁহারা সম্রাটের দর্শনলাভেচ্ছায় উপবেশন করিয়াছিলেন। সূর্য্যোদয়ের কিঞ্চিৎ পূর্ব্বে দলে দলে পুত্ত্রকলত্র সমভিব্যাহারে নাগরিকগণ স্তূপসন্নিধানে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিলেন। রাত্রিকাল হইতে সশস্ত্র সৈনিকগণ শ্রেণীবদ্ধ হইয়া পথ রক্ষা করিতেছিল। নাগরিকগণ যথাবিধি স্তূপার্চ্চনা ও বেষ্টনী পরিক্রমণ করিয়া পরে বৃদ্ধ ও বোধিসত্ত্বগণেরও অর্চ্চনা করিতেছিলেন। স্তূপার্চ্চনাকালে মন্ত্রপাঠের পর ভিক্ষুগণ বা তাঁহাদিগের শিষ্যমণ্ডলী নাগরিকদিগের নিকট হইতে যথাসম্ভব অর্থাকর্ষণ করিতেছিলেন, জীবিত বুদ্ধ বা বোধিসত্ত্বগণ অর্চ্চিত হইবার পর স্বয়ং দক্ষিণা গ্রহণ করিতেছিলেন, তাঁহাদিগের পার্শ্বচারিণী শক্তিসমূহও যথাসম্ভব উপার্জ্জনের ব্যবস্থা করিতেছিলেন। আমার পার্শ্বে দাঁড়াইয়া মধুবিহ্বলা শক্তিরূপিণী জনৈকা মহিলা দারুণ তৃষ্ণা
১৪২