পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাষাণের কথা

করিত। প্রতিদিন শত শত নরনারী আমাকে দর্শন করিতে আসিত। পুষ্পচন্দন ও বিল্বপত্রে আমাকে আচ্ছাদিত করিত, দধিদুগ্ধঘৃতমধু ও জলধারায় আমার দেহ পিচ্ছিল করিয়া রাথিত, সুবর্ণ ও রজত খণ্ড বর্ষণে আমাকে আচ্ছন্ন করিয়া মঠের কোষ পরিপূর্ণ করিত। বন্ধ্যা আমার নিকট পুত্র কামনা করিত, কুমারী ভর্ত্তা কামনা করিত, নির্ধন ধনকামনা করিত, যোদ্ধা জয়কামনা করিত। কাহারও কামনা যদি অকস্মাৎ দৈববলে পূর্ণ হইত, তাহা হইলে আমার শক্তির উপরে মহাকোশলবাসিগণের বিশ্বাস শতগুণ বর্দ্ধিত হইত, আমি তাহাদিগকে বলিতাম যে আমি চলচ্ছক্তিহীন পাষাণ খণ্ড, আমাতে দেবত্বের কোন চিহ্ন নাই। বাসনাপূর্ণ করিবার ক্ষমতা যদি আমার থাকিত তাহা হইলে আমি বৌদ্ধস্তূপের বেষ্টনীর স্তম্ভ হইতে দেবাদিদেব মহাদেবে পরিণত হইতাম না, তাহা হইলে মহাস্থবিরের সযত্ন নির্ম্মিত স্তূপে ধ্বংসাবশেষের উপরে ব্রাহ্মণের দেবতার মন্দির নির্ম্মিত হইতে পারিত না, ধনভূতির নগরশীর্ষে আভীর রমণী মেষচারণ করিতে পারিত না। কিন্তু আমার কথায় কেহ কর্ণপাত করিত না, আমার ভাষা হৃদয়ঙ্গম করিবার শক্তি বা ইচ্ছা তাহাদিগের ছিল না। শত শত বৃহৎ ঘণ্টার ঘোর রোলে শত শত নরনারীর মুখনিঃসৃত “শিব শিব শম্ভো” “হর হর মহাদেব” শব্দে বৃহৎ মন্দিরের ভিত্তি পর্য্যন্ত কম্পিত হইত, নিশ্চল পাষাণের অস্ফুট ভাষা জনসঙ্ঘের শ্রুতিগোচর হইত না। ক্রমে অবিশ্রান্ত জল বর্ষণে আমার তৈলাক্তদেহ দ্বিখণ্ডিত হইয়া গেল। এক দিন রাত্রিকালে মঠবাসিগণ গোপনে দুইজন তরুণ শিল্পির সাহায্যে আমার জীর্ণদেহ তাম্রমিশ্রিত রজতখণ্ডের দ্বারা যোজনা করিল, ও রজনী শেষ হইবার পূর্ব্বে তাহাদিগকে নিহত করিয়া, মন্দির তলে

১৫৮