পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাষাণের কথা

আচ্ছাদনের পাষাণনিম্নে তাহাদিগের শবদেহ সমাহিত করিল। এই রূপে কত দিন অতিবাহিত হইল তাহা বলিতে পারি না। শুনিয়াছিলাম হর্ষের মাতুলপুত্র ভণ্ডির বংশ কান্যকুব্জে সিংহাসনারোহণ করিয়া সম্রাট উপাধি ধারণ করিয়াছিল। তাহার পর কি হইল তাহা শুনিতে পাই নাই। শুনিয়াছিলাম মগধে প্রভাকরবর্দ্ধনের মাতুলপুত্র সম্রাট উপাধি ধারণ করিয়া কিছুদিন আধিপত্য অক্ষুণ্ণ রাখিয়াছিলেন। কিছুদিন গ্রামে গ্রামে, নগরে নগরে সম্রাট দেখিতে পাওয়া যাইত। আর্য্যাবর্ত্তে যত নগর ছিল তাহা অপেক্ষা সাম্রাজ্যের সংখ্যা অধিক হইয়াছিল, দেশের লোকে সম্রাট বলিলে সামান্য ভূস্বামী বুঝিত।

 ক্রমে মন্দির জীর্ণ হইল, মঠবাসিগণ অতুল সম্পতির অধীশ্বর ছইয়া বিলাসিতার স্রোতে নিমগ্ন হইলেন। যে ক্ষমতার বলে তাঁহাদিগের পূর্ব্ববর্ত্তীগণ বর্ব্বর জাতির মনোহরণ করিয়াছিলেন সে ক্ষমতা অন্তর্হিত হইল। অন্যান্য ভূসম্পত্তির ন্যায় দেবাদিদেব মহাদেব আমিও অর্থাগমের উপায়ের মধ্যে পরিগণিত হইয়াছিলাম। ব্রাহ্মণদিগের ভাষানুসারে আমি জগতের ঈশ্বর হইয়াও ইদানীং কারারুদ্ধ হইয়াছিলাম, অর্থলোলুপ মঠবাসিগণ আমার দেহ কাঞ্চন নির্ম্মিত আবরণে আচ্ছাদিত করিয়া রাখিত, আমার দরিদ্র ভক্তগণ আবরণের উপরে পুষ্প বিল্বপত্র ও বারিবর্ষণ করিত। কেবল যাহারা সুবর্ণ বর্ষণে আমার গৌরীপট্ট মগ্ন করিতে পারিত তাহারাই আমার পাষাণ স্বরূপের সাক্ষাৎ পাইত। এইরূপে ক্ষুদ্র আটবিক রাজ্যে শতাব্দীর পর শতাব্দী কাটিয়া গেল।

 বহুদিন পরে শ্রুত হইল যে আর্য্যাবর্ত্তে পুনরায় যবন প্রবেশ করিয়াছে, পুনরায় গান্ধারে ও পঞ্চনদে যবনের অধিকার দৃষ্ট হইয়াছে। নূতন বলে বলীয়ান্ হইয়া যবন জাতি প্রাচীন পারসিক রাজ্য ধ্বংস

১৫৯