পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাষাণের কথা

ভাষা, পরিচ্ছদ, আচার ব্যবহার কোন বিষয়েই প্রাচীন যবনদিগের সহিত সাদৃশ্য ছিল না। আকারে তাহারা শক এবং হূণদিগের অনুরূপ, পরিচ্ছদে বনবাসী বর্ব্বরগণের এবং আচার ব্যবহারে চণ্ডালসদৃশ। যখন লুণ্ঠন করিবার কিছু আর অবশিষ্ট রহিল না, তখন দলপতির আদেশে যবনসেনা আমার আবরণ মোচন করিল। আবরণের অভ্যন্তরে নীরস পাষাণ ব্যতীত আর কিছুই নাই দেখিয়া যবনগণ ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিল। দেখিতে দেখিতে গদা ও পরশুর আঘাতে আমার ঊর্দ্ধদেশ খণ্ড খণ্ড হইয়া গেল, বর্ত্তমান সময়ে বিংশতি শতাব্দীর চিত্রশালায় আমার যে আকার দেখিতেছ, এ আকার যবনগণ কর্ত্তৃক প্রদত্ত। হতাশ্বাস হইয়া যবনসেনা আমাকে পরিত্যাগ করিল। দলপতির আদেশে লুণ্ঠনলব্ধ দ্রব্যসম্ভার ক্রমে ক্রমে মন্দিরের বহির্দ্দেশে প্রেরিত হইল। তাহার পর যবনগণ শুষ্ক কাষ্ঠে গর্ভগৃহ পরিপূর্ণ করিয়া ফেলিল, দেখিতে দেখিতে ইন্ধনের চূড়া মন্দিরাভ্যন্তরের শিখরদেশ স্পর্শ করিল; তখন কাষ্ঠরাশিতে অগ্নিসংযোগ করিয়া যবনগণ নিষ্ক্রান্ত হইয়া গেল। দেখিতে দেখিতে মন্দির প্রাঙ্গণের শত শত স্থান হইতে লেলিহান অগ্নিশিখা মন্দিরের পাযাণখণ্ড সমূহ দগ্ধ করিতে লাগিল। গর্ভগৃহে সঞ্চিত কাষ্ঠরাশি ক্রমশঃ ধীরে ধীরে প্রজ্জ্বলিত হইয়া উঠিল, অন্তরে ও বাহিরে উভয় দিক হইতে প্রবল অগ্ন্যুত্তাপ আসিয়া এক এক খানি করিয়া পাষাণ স্থানচ্যুত করিতে লাগিল। গর্ভগৃহের মধ্যে উত্তাপ অসহ্য হইয়া উঠিল, তখন মন্দির প্রাঙ্গণে অগ্নিক্ষেত্রে পরিণত হইয়াছে। ক্রমে ভিত্তির বন্ধন শিথিল হইয়া আসিলে মহাশব্দের সহিত বৃহৎ মন্দিরশিখর ভূপতিত হইল, গুরুভার পাষাণখণ্ড সমূহ গর্ভগৃহের অগ্নি নির্ব্বাপিত করিল বটে, কিন্তু গর্ভগৃহের আর কোন চিহ্নই রহিল না। পাষাণরাশির নিম্নে পড়িয়া আমি লোকচক্ষুর অন্তরালে অপসৃত

১৬১
[ ট