পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১৭৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পাষাণের কথা

 শিশু যেমন অন্ধকার দেখিয়া ভীত হয়, বিজনে অজ্ঞাতপথ অবলম্বন করিতে মানব হৃদয় যেমন কম্পিত হয়, শিশুবৎ আটবিক জাতিও সেইরূপ ভয়ে অভিভূত হইল। তাহাদিগের গ্রামবৃদ্ধগণ এই অজ্ঞাতপূর্ব্ব বনদেবতার সন্তোষ সাধনে সচেষ্ট হইল। আমরা আশ্চর্য্য হইয়া শুনিতাম সহস্র সহস্র বর্ষ পূর্ব্বে প্রাচীন মানবজাতি উপাসনার জন্য যে স্থান নির্দ্দেশ করিয়াছিল, অমূলক ভয়ের বশবর্ত্তী হইয়া যুগের পর যুগ মানবজাতি শ্রদ্ধায় বা ভয়ে সেই স্থানে নতশির হইতেছে। ধীরে ধীরে ভগ্ন পাষাণের স্তূপ নবাগত জাতির উপাসনার কেন্দ্র হইয়া উঠিল। মন্দিরের ভগ্নাবশেষের এক পার্শ্বে পর্ব্বতবাসিগণ চন্দন লেপন করিয়া আমার উদ্দেশে পত্র, পুষ্প, ফল নিবেদন করিত, তাহার অপর পার্শ্বে নূতন আটবিক জাতি তাহাদিগের সুচিরাগত প্রথানুসারে শূকর, কুক্কুট বলি দিয়া মদ্য মাংসের উপহার সমেত আমাদিগের অর্চ্চনা করিত। এই দীর্ঘকালে মন্দিরের ভগ্নাবশেষের উপরে অনেকগুলি দীর্ঘাকার বৃক্ষ জন্মিয়াছিল, তাহারাও উপাসনার অংশ লাভ করিত। নবাগত বর্ব্বরজাতি ক্রমশঃ সভ্য হইয়া উঠিতেছিল। প্রথমে তাহারা বন্য পশু হনন করিয়া জীবনযাত্রা নির্ব্বাহ করিত, তাহাদিগের মাংসে অন্ন সংস্থান ও চর্ম্মে আচ্ছাদন হইত। ক্রমে পর্ব্বতবাসী বর্ব্বরগণের রীতি নীতি অনুসরণ করিয়া তাহারা হলকর্ষণ করিতে শিক্ষা করিল, ক্রমে বন পরিষ্কৃত হইতে আরম্ভ হইল।

 একদিন আমাদিগের উপরিস্থিত পাষাণখণ্ডগুলি কহিল যে অরণ্যবাসী বর্ব্বরগণের উপাসনা দেখিতে একজন নূতন মানব আসিয়াছে, তাহার বর্ণ শ্বেত, পরিচ্ছদ বিদেশীয় ও অজ্ঞাতপূর্ব্ব। সে ব্যক্তি দূরে দাঁড়াইয়া বর্ব্বরজাতির উপাসনা দেখিয়া চলিয়া গেল। আমাদিগের নিকটে আসিল না বা আমাদিগকে স্পর্শ করিল না। শ্বেতকায় মানরের কথা শুনিয়া

১৬৪