পাষাণের কথা
ভাষার প্রয়োগ শুনিয়াছিলাম, সে ভাষার অবিমিশ্র প্রয়োগ আর শুনি নাই। পূর্ব্বে নবাগত শ্বেতকায় জাতির মুখে যে ভাষা শুনিতাম, সে ভাষাও আর শুনি নাই। এখন নাগরিকগণকে যে ভাষা ব্যবহার করিতে শুনিলাম, তাহা প্রাচীন শ্বেতকায় জাতির ভাষার ন্যায়, কিন্তু সেরূপ পুরুষ নহে, তাহা অপেক্ষাকৃত কোমল ও সুশ্রাব্য।
বহুকাল পরে মনুষ্যজাতি দেখিলাম। আমি বৃদ্ধ—অতি বৃদ্ধ; আমার বয়সের পরিমাণ করিবার যদি আমার ক্ষমতা থাকিত, তাহা হইলে, আমার বয়স শুনিয়া তোমরা বিস্মিত হইতে। বৃদ্ধগণ সাধারণতঃ প্রগল্ভ হইয়া থাকে; নগরবাসী মনুষ্যজাতিকে কি প্রকার দেখিলাম তাহা বলিতেছি, তুমি চিত্ত সংযত কর, আমার প্রগল্ভতায় বিরক্ত হইও না। শকটবাহিত পাষাণ দেখিতে নানাবিধ মনুষ্য আসিয়াছিল। যাহারা রাজপথে আসিয়াছিল তাহাদের মধ্যে স্ত্রী ও পুরুষ, বৃদ্ধ ও বালক, শ্বেত ও কৃষ্ণ, সর্ব্ববিধ মনুষ্যই দেখিয়াছিলাম। যাহারা আমাদিগকে ছেদন করিতে পর্ব্বতপার্শ্বে গমন করিয়াছিল, তাহারা শ্রমজীবী, কঠোর পরিশ্রমে পটু, পরুষভাষী, বহুভাষী ও বহুভোজী। শকটে প্রস্তর আসিতেছে শুনিয়া যাহারা নগরপ্রান্তে আমাদিগকে দেখিতে গিয়াছিল, তাহারা অধিকাংশই শ্রমজীবী, তবে তাহাদিগের মধ্যে দুই একজনকে দেখিয়া বোধ হইয়াছিল, তাহারা যেন অপর কোন জগতের মনুষ্য, তাহাদিগের সুদীর্ঘ বপু ও কোমল মুখকান্তি দেখিয়া মনে হইয়াছিল, যেন তাহারা কঠোর শারীরিক শ্রমে অভ্যস্ত নহে। তাহারা সুদৃশ্য বহুমূল্য পরিচ্ছদ ব্যবহার করে; তাহারা যে স্থান দিয়া চলিয়া যায় সে স্থান সুগন্ধে পূর্ণ হইয়া উঠে; তাহাদিগের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ অথচ যেন আলস্যজড়িত। পরে শুনিয়াছিলাম, তাহারা বিলাসপ্রিয় নাগরিক। নগরপ্রাকার অতিক্রম-
১২