পাতা:পাষাণের কথা.djvu/২৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

পাষাণের কথা

যখন নগরপ্রাকার অতিক্রম করিয়া নগরমধ্যে গমন করিতেছিলাম তখন দেখিতেছিলাম, জনস্রোতঃ নানাপথ হইতে আসিয়া একত্র মিলিত হইতেছে। পরস্পর অভিভাষণ না করিয়া, এমন কি পরস্পরের দিকে দৃষ্টিপাতও না করিয়া যে যাহার গন্তব্যপথে চলিয়া যাইতেছে। প্রথম দিন নগর দেখিয়া ইহা আমার নিকট একান্ত বিস্ময়কর বোধ হইয়াছিল। রাজপথের উভয় পার্শ্বে সুসজ্জিত বিপনীশ্রেণী, অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতা, বিপুল পণ্যের সমাবেশ প্রথম দেখিয়া বড়ই আশ্চর্য্যান্বিত হইয়াছিলাম। বিপনীর উপরে গবাক্ষপথে শকটশ্রেণী-দর্শনলোলুপা অবগুণ্ঠনশূন্যা অন্তঃপুরিকাগণকেও দেখিয়াছিলাম! ইহার পূর্ব্বে কখনও এত অধিক স্ত্রীলোকের একত্র সমাবেশ দেখি নাই। সে দিন কত অলঙ্কার, কত বস্ত্র, কত বেশবৈচিত্র দেখিয়াছি তাহা আর কি বলিব! শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হইয়াছে, কিন্তু মনুষ্যজাতির প্রথম নগর দেখিয়া যেরূপ আনন্দ হইয়াছিল, সেরূপ আনন্দ আর কখনও উপভোগ করিব কি না সন্দেহ। আমাদিগকে দেখিতে নগরের প্রায় সমুদায় লোকই আসিয়াছিল; রাজাও আসিয়াছিলেন, তিনি নগরের মধ্যভাগে অষ্টাশ্বযোজিত সুবর্ণনির্ম্মিত রথারোহণে আসিয়াছিলেন। অশ্বারূঢ় রাজকর্ম্মচারিগণ তাঁহাকে বেষ্টন করিয়া ছিল; তাঁহাকে দেখিয়া নগরবাসিগণ আনন্দধ্বনি করিতেছিল; বাতায়নপথে নাগরিকগণ পুষ্প ও লাজ বৃষ্টি করিতেছিল। রাজসমাগম যেন একটি স্বতন্ত্র উৎসব হইয়া উঠিয়াছিল। রাজপথে দেখিয়াছিলাম, সুন্দরী রমণীগণ পুষ্পসজ্জায় সজ্জিত হইয়া নাগরিকগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছে। তাহাদিগের আকার-ইঙ্গিত, আচার-ব্যবহার তখন আমার নিকট সম্পূর্ণ নূতন। পরে শুনিয়াছি তাহারা বারাঙ্গনা।

১৪