পাতা:পাষাণের কথা.djvu/২৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পাষাণের কথা

 নগর অতিক্রম করিয়া দেখিয়াছিলাম, নগরপ্রাকারের বহির্ভাগে সুসজ্জিত পুষ্পবাটিকা সমূহ নরনারীতে পরিপূর্ণ। বিবিধবর্ণে রঞ্জিত, নানা আভরণে ভূষিত সুন্দরীগণের কলহাস্যে নগরোপকণ্ঠ যেন নূতন শ্রীসম্পন্ন হইয়া উঠিয়াছে। তাহদের আসবপানে ঈষদ্‌রক্ত আকর্ণবিশ্রান্ত নয়ন কটাক্ষপাতে যেন ক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছে। সেরূপ বিলাসবিহ্বল দৃষ্টি পরে আর কখনও দেখি নাই। যাহারা কাদম্ব পান করিত, তাহাদিগের কাদম্বের সহিত তাহারাও অন্তর্হিত হইয়াছে। লোকে নিত্য যাহা দেখিয়া থাকে, তাহার প্রতি লোকের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় না। যাহা নূতন দেখে তাহা দেখিয়া যেন তৃপ্তি হয় না। নগর, নাগরিক, নাগরিকা, উপনগর, পুষ্পবাটিকা, উৎসব সকলই তখন আমার নিকট নূতন। সে দিন যেভাবে মনুষ্যজাতিকে দেখিয়াছিলাম, তাহার পূর্ব্বে কখনও সে ভাবে দেখি নাই, আর কখনও সে ভাবে দেখিব না। যখন পর্ব্বতের সানুদেশে ছিলাম, তখন দেখিতাম সন্ধ্যাগমে বনরাজি নিঃশব্দ হইত। যে দিন চন্দ্রোদয় হইত না, সেদিন খদ্যোতের আলোকে পর্ব্বতমালা ভীষণ বোধ হইত। নগর দেখিয়া আমার সেই কথা মনে হইত। আমরা যে প্রান্তরে পড়িয়া ছিলাম, সন্ধ্যাগমে সেই স্থান হইতে দেখিতাম, দূরে বিশাল পর্ব্বতমালার ন্যায় অন্ধকারাচ্ছন্ন সৌধশ্রেণীর অস্পষ্টমূর্ত্তি দৃষ্ট হইতেছে, পর্ব্বতগাত্রে খদ্যোতশ্রেণীর ন্যায় নগরে অসংখ্য দীপশ্রেণী প্রজ্জ্বলিত হইয়াছে। দীপ কাহাকে বলে পূর্ব্বে তাহা জানিতাম না। অগ্নির আলোক দেখিয়াছি, কিন্তু পূর্ব্বে দীপালোক দেখি নাই। দূর হইতে স্নিগ্ধ দীপালোক স্নিগ্ধতর বোধ হইত। নিশাগমে নগরের নানা স্থান হইতে গীতবাদ্যের রব আসিত। ক্রমে নদীবক্ষে দুই একখানি তরণী দেখা যাইত; ক্ষুদ্র

১৫