পাষাণের কথা
খোদিত হইয়াছে তাহা পারসিক ভাস্কর শিল্প-প্রভাবের অন্যতম ফল। কিলিকীয় মাখেতা ইহা স্বীকার করিয়া কহিলেন যে, স্তম্ভশীর্ষে জীবজন্তুর আকৃতির অনুসরণ প্রাচীন জাতিসমূহের মধ্যে ছিল না। প্রাচীন মিজ্রাইম্ দেশীয়গণও স্তম্ভশীর্ষে প্রস্ফুটিত বা প্রস্ফুটনোন্মুখ পদ্মের অনুকরণ করিতেন। অলসদ্দবাসী লিওনাত কহিলেন যে, প্রাচীন ভারতে চতুষ্কোণ বা অষ্টকোণ স্তম্ভ ব্যবহৃত হইত, অনুমান হয়। কারণ প্রাচীন হর্ম্ম্যমাত্রেই এইরূপ স্তম্ভ দেখা যায়; গোলাকার স্তম্ভ অতীব বিরল। বাহ্লীকনিবাসী যবনগণ যখন শকজাতির তাড়নায় পূর্ব্বাভিমুখে যাত্রা করিতে বাধ্য হয়েন, যখন প্রাচীন বাহ্লীক রাজ্য চিরকালের জন্য ভারতীয়গণের হস্তচ্যুত হয়, তখন হইতেই ভারতে যাবনিক শিল্প-প্রণালীর সূচনা হইয়াছে। কিন্তু ইহা অদ্যাবধি সুবস্তু নদীর দক্ষিণ তীরে প্রবেশ লাভ করে নাই। কোন একজন বিশিষ্ট নাগরিক কহিলেন যে, তাঁহার পিতা আনর্ত্ত দেশ হইতে পোতারোহণে ময়ূর বিক্রয়ের জন্য বভেরু নগরে গমন করিয়াছিলেন। তিনিও এই বাণিজ্যযাত্রায় আরব দেশ অতিক্রম করিয়া ধূপ ও গন্ধদ্রব্য আহরণের জন্য মিজ্রাইম্ দেশের দক্ষিণস্থ রাক্ষসগণের দেশে গিয়াছিলেন। সে দেশের অধিবাসিগণ দাক্ষিণাত্যবাসিগণের ন্যায় ঘোর কৃষ্ণবর্ণ ও খর্ব্বাকার। মিজ্রাইম্বাসিগণ এই দেশকে পু-আহিত নামে অভিহিত করেন ও ভারতবাসী বণিকগণ উহাকে অপভ্রংশ করিয়া পুণ্য-নাম দিয়াছেন। এইরূপ কথোপকথনে দিবস অতিবাহিত হইত। সন্ধ্যাকালে শিল্পী, শ্রমজীবী ও নাগরিকগণ নগরে প্রত্যাবর্ত্তন করিতেন। কেবল শান্তিরক্ষকগণ খোদিত প্রস্তরের রক্ষণাবেক্ষণ জন্য রাত্রিকালে প্রান্তরের মধ্যে বাস করিত। কারণ, একদা ব্রাহ্মণগণ ঈর্ষ্যাবশতঃ ভাস্করগণের বহু পরিশ্রমের ফল বিনাশ করিবার চেষ্টা করিয়াছিল।