পাষাণের কথা
[ ৪ ]
উৎসবের পূর্ব্বদিন হইতে নবনির্ম্মিত স্তূপ পত্রপুষ্পে সজ্জিত হইতে লাগিল। তোরণ, স্তম্ভ, আলম্বন হরিদ্বর্ণ পত্রে ও নানা বর্ণের পুষ্পে মণ্ডিত হইয়া গেল। তৎপূর্ব্বে সে ভাবে আমাদিগকে কেহ সজ্জিত করে নাই। পরে সদ্ধর্ম্মের প্রভাব বৃদ্ধি হইয়া যখন স্তূপের যশঃ বিকীর্ণ হইয়া পড়িয়াছিল তখনও এবম্বিধ উৎসব আমি কখনও দেখি নাই। সদ্ধর্ম্মানুরাগী শকরাজাগণের আগমনে হেমরজতখচিত আবরণে স্তূপের চতুষ্পার্শস্থ বিশাল প্রান্তর পর্য্যন্ত আবৃত হইতে দেখিয়াছি, কিন্তু শ্যাম পল্লব ও শ্বেত পুষ্প মণ্ডিত হইয়া স্তূপের যে শোভা হইয়াছিল, তাহা আর কখনই দেখি নাই। স্তূপের পূর্ব্ব তোরণ নগরাভিমুখে স্থাপিত হইয়াছিল। ইহার আবরণে চারিটি স্তম্ভ ছিল—প্রথম স্তম্ভে তিনটি দেবমূর্ত্তি খোদিত হইয়াছিল। প্রথম স্তম্ভের উত্তর দিকে নাগরাজ চক্রবাকের মূর্ত্তি। নাগরাজ পর্ব্বতশিখরে দণ্ডায়মান, তাঁহার পদতলে কন্দরে কন্দরে সিংহ, বৃক প্রভৃতি শ্বাপদগণ রক্ষিত হইতেছে। নাগরাজের মস্তকে পঞ্চশীর্ষ সর্প তাঁহার নাগত্ব জ্ঞাপন করিতেছে। কেয়ূর, বলয়, হার প্রভৃতি রত্নালঙ্কারে শোভিত হইয়া নাগরাজ পূর্ব্বদ্বার রক্ষা করিতেছেন। নাগরাজের উপরে এরং স্তম্ভের শীর্ষদেশে যে অর্দ্ধবৃত্তের চিহ্ন অদ্যাপি বর্ত্তমান আছে, তাহা নানাবিধ পত্রের চিত্রে পূর্ণ ছিল। ধর্ম্মরক্ষিত নামক জনৈক প্রকৃত বিশ্বাসী এই স্তম্ভের ব্যয়ভার বহন করিয়াছিলেন। প্রথম স্তম্ভের অপর দুই পার্শ্বে গঙ্গিত ও হয়গ্রীব নামক যক্ষদ্বয়ের মূর্ত্তি অঙ্কিত হইয়াছিল, কেবল চতুর্থ পার্শ্বে সূচিত্রয়ের ভেদের জন্য কোন চিত্র অঙ্কিত হয় নাই। গঙ্গিত করিপৃষ্ঠে ও অজকালক শিলাসঞ্চয়ের উপরে কৃতাঞ্জলিপুটে দণ্ডায়-
৪০