পাতা:পাষাণের কথা.djvu/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাষাণের কথা

[ ৫ ]

 প্রভাতে সূর্য্যোদয়ের বহুপূর্ব্বে নগরের দিক হইতে কোলাহল শ্রুত হইতে লাগিল। তখন শিশির কাল। হিমকণসিক্ত প্রান্তরে শুভ্রতুষারের ক্ষীণাবরণ শুক্ল উত্তরচ্ছদের ন্যায় দেখাইতেছিল। হিমকণসিক্ত পল্লবে তুষারখণ্ড আবদ্ধ থাকায় মনে হইতেছিল যেন বনস্পতিগণ পুণ্যাহে লাজ নিক্ষেপ করিতেছেন। নৈশ তমোভেদ করিয়া যখন পূর্ব্বপ্রান্তে বাহ্লীকাঙ্গনার সীমন্তে সিন্দূর ছটার ন্যায় অরুণরাগ লক্ষিত হইল, তখন জনসঙ্ঘের পাদপেষণে প্রান্তরের তুষারাবরণ কর্দ্দমে পরিণত হইয়াছে, অসাধারণ কোলাহলে বিহগকুল কুলায় পরিত্যাগ করিয়া পলায়ন করিয়াছে, নানা রাগরঞ্জিত উষ্ণীষে ও শিরস্ত্রাণে সমগ্র প্রান্তর পরিপূর্ণ হইয়া গিয়াছে। জনতার মধ্যদেশে রজ্জুরক্ষিত কোষ্ঠপালগুপ্ত পথ, স্তূপবেষ্টনী হইতে নগরদ্বার পর্য্যন্ত বিস্তৃত। যেন একটি বিশাল কালব্যাল মৃত্যু যন্ত্রণায় লম্বমান হইয়াছে। সূর্য্যোদয়ের ঈষৎ পূর্ব্বে পুরাঙ্গনাগণ এই পথ পরিষ্কৃত করিয়া গেল, তাহাদিগের পর কুমারীগণ দলে দলে অঞ্চল ভরিয়া নানাবিধ পুষ্প লইয়া আসিয়া সুগন্ধি কুসুমে পথ আচ্ছন্ন করিয়া গেল। সুগন্ধ জলপূর্ণ ভৃঙ্গার হস্তে বালকগণ আসিয়া পুষ্পরাশি সিঞ্চন করিয়া গেল, ইতিমধ্যে স্তূপের চারি তোরণের আবরণপার্শ্বে উপবিষ্ট বাদকগণ যন্ত্র সংযোগে স্তুতিগান আরম্ভ করিল। আমরা যে পুষ্পসজ্জায় সজ্জিত হইয়াছিলাম তাহা প্রফুল্ল রাখিবার জন্য পরিচারকগণ সূর্য্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে উপর্যুপরি গন্ধবারি নিক্ষেপ করিতে লাগিল। এমন সময়ে নগরবারে তুর্য্যনিনাদ শ্রুত হইল, সঙ্গে সঙ্গে নগরতোরণ হইতে দেবযাত্রা নির্গত হইল। দেবযাত্রার পুরোভাগে, পংক্তির পর পংক্তি চীবরধারী ভিক্ষু ও

৫৩