পাষাণের কথা
রাজা ধনভূতির অন্তিমকাল উপস্থিত। ধনভূতির মৃত্যু হইল। তাহার শিশুপুত্ত্রকে সিংহাসনে স্থাপিত করিয়া বিশ্বস্ত রাজকর্ম্মচারিগণ রাজ্যরক্ষা করিতে লাগিলেন। এইরূপে কিছুদিন কাটিয়া গেল, তক্ষশিলা হইতে সিংহদত্তের নির্ব্বাণলাভের সংবাদ আসিল। তাহার পরই প্রলয় ঝটিকা উত্থিত হইল।
পতনোন্মুখ যবনজাতিকে, বোধ হয়, সিংহদত্তই দণ্ডায়মান রাখিয়া ছিলেন। স্বদেশ, স্বধর্ম্ম, স্বভাষাচ্যুত যবনজাতির মধ্যে একতার অত্যন্ত অভাব হইয়াছিল। সিংহদত্তই বন্ধনরজ্জুর ন্যায় কাষ্ঠখণ্ডগুলি একত্র রাখিয়াছিলেন। সেই রজ্জুর প্রভাবেই যবনগণ শকজাতির প্রথম আক্রমণ রোধ করিতে সমর্থ হইয়াছিল। শকদ্বীপ ত্যাগ করিয়া পঙ্গপালের ন্যায় শকজাতি দলে দলে মহানদী পার হইতেছে, মহানদী আর শকযবনাধিকারের সীমা নাই। কপিশায় শকরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। গান্ধার, উদ্যান, উরস ও টক্কদেশে যবনরাজগণ আত্মরক্ষা করিতে সমর্থ হইয়াছেন বটে, কিন্তু তাহাও সিংহদত্তের জন্য—সিংহদত্তের প্রভাবে। সিংহদত্তের অবর্ত্তমানে আর্য্যাবর্ত্তের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত রক্ষার কি ব্যবস্থা হইবে, সে চিন্তা মধ্যদেশের রাজগণের মস্তিষ্কে প্রবেশ করে নাই। প্রাচীন পৌরবরাজ্যের অধঃপতনে তাঁহারা আনন্দিত হইয়াছিলেন, স্বধর্ম্মত্যাগী সিংহদত্তের প্রভাববৃদ্ধিতে তাঁহারা ঈর্ষ্যান্বিত হইয়াছিলেন। কিন্তু সিংহদত্ত তাঁহাদিগের জন্য কি করিতেছেন, সিংহদত্তের অভাবে তাঁহাদিগের কি উপায় হইবে, কুরুক্ষেত্র হইতে পাটলিপুত্র পর্য্যন্ত কোন রাজাই সে বিষয়ে মনোযোগ করেন নাই। সিংহদত্তের অভাব হইলে মথুরার অধিকারবঞ্চিত হইয়া রামদত্ত সক্ষোভে বলিয়াছিলেন, আজ বর্ষীয়ান্ পৌরবমহাস্থবির জীবিত থাকিলে শকগণকে সুবস্তু নদী পার করিয়া রাখিয়া আসিতাম।
৬৬