পাতা:পাষাণের কথা.djvu/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাষাণের কথা

মগধের বহির্দ্দেশে লক্ষ্য হয় না। যে দিন সংবাদ আসিল, শকরাজের বিপুল বাহিনী নগর হইতে পঞ্চদশ ক্রোশ দূরে শিবির স্থাপন করিয়াছে, সেদিন নগরাধিপতির সত্য সত্যই ঘোর দুর্দ্দিন। মৌর্য্য সাম্রাজ্যের অধঃপতনের পরে সুঙ্গরাজগণ কিয়ৎ পরিমাণে করদরাজগণকে সম্রাটের প্রভাব অনুভব করাইতে পারিতেন; কিন্তু পরবর্ত্তী রাজগণ এককালীন ক্ষমতাহীন ছিলেন, নামে মাত্র আর্য্যাবর্ত্ত অন্ধ্রসাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। অধিকাংশ আর্য্যাবর্ত্তবাসী অন্ধ্র কি তাহা জানিত না; কেহ কেহ বলিত তাহারা ক্ষত্রিয়জাতীয়, কেহ বা বলিত, তাহারা দস্যু। দাক্ষিণাত্যের কোন নিভৃত উপত্যকার অন্ধ্ররাজের রাজধানী অবস্থিত ছিল, আর্য্যাবর্ত্তে, বিশেষতঃ নগরে, তাহা অনেকেই অবগত ছিলেন না। যে দিন শ্রুত হইল যে, পঞ্চাশৎ সহস্র শক অশ্বারোহী নগরাভিমুখে ধাবমান হইয়াছে, সেদিন নগরাধিপতিকে সাহায্য করে এমন ব্যক্তি কেহই ছিল না। আসন্ন বিপৎ শঙ্কায় ব্যাকুল নরনারী দলে দলে নগর পরিত্যাগ করিয়া পর্ব্বতাভিমুখে পলায়ন করিল, সঙ্ঘারাম ত্যাগ করিয়া ভিক্ষুগণ উজ্জয়িনীর পথে প্রস্থান করিলেন, নগরে এমন লোক রহিল না যে, নগর প্রাকার রক্ষা করে। শকসৈন্যের আগমন সংবাদ শুনিয়া শুক্লবসনপরিহিতা রাজমাতা বুদ্ধের শরীরনিধান সম্মুখে ভূমিশয্যা গ্রহণ করিলেন; মুষ্টিমেয় শরীররক্ষী লইয়া তরুণ রাজা শকসৈন্যের আক্রমণ প্রতিরোধ করিতে প্রস্তুত হইলেন। যাহারা নগর ত্যাগ করিয়া যায় নাই তাহাদিগের মধ্যে অধিকাংশই সুশিক্ষিত রণদক্ষ সৈন্য, কিন্তু তাহাদিগের সংখ্যা এত সামান্য যে, পঞ্চাশৎ-সহস্র অশ্বারোহীর বিরুদ্ধে তাহারা একপদ তিষ্ঠিতে পারিত কিনা সন্দেহ।

 পরদিন প্রভাতে নগর নিস্তব্ধ, জনশূন্য। প্রান্তরে কৃষক হলকর্ষণ করিতে বা মেষপাল চারণ করিতে আসে নাই। প্রতিদিন প্রত্যূষে সঙ্ঘারামবাসী

৬৮