পাষাণের কথা
করিয়া লইয়া আসিতে। শকসৈনিক নিক্ষিপ্ত শূল রাজ্ঞীর বক্ষবিদীর্ণ করিয়া মেরুদণ্ডে প্রোথিত হইয়া গিয়াছিল, শূলের ফলক ও তৎসংলগ্ন অস্থিখণ্ড এখন বর্ব্বরগ্রামে উপাসনার সামগ্রী হইয়াছে, অবশিষ্ট অস্থিখণ্ড ও বহুমূল্য বস্ত্রের অবশেষ ধূলায় মিশাইয়া গিয়াছে। নগরধ্বংসের পরদিন সংঙ্ঘারামের জনৈক প্রাচীন পরিচারক অতি সন্তর্পণে আসিয়া স্তূপ বেষ্টনী ও সঙ্ঘারাম সন্ধান করিতে লাগিল; গর্ভগৃহের দ্বারে আসিয়া দেখিল যে, শূলের কাষ্ঠদণ্ডের অর্দ্ধভাগ দ্বারের বাহিরে রহিয়াছে, দ্বারদেশে ধূল্যবলুণ্ঠিত প্রাণশূন্য দেহ পতিত রহিয়াছে। বহু যত্নেও সে দেহ হইতে শূল মোচন করিতে পারিল না; তাহার জীর্ণ দেহে ক্ষীণ হস্তে এমন বল ছিল না যে, মেরুদণ্ডে দৃঢ় ভাবে প্রোথিত বৃহৎ শূল টানিয়া বাহির করে। সে ধীরে ধীরে মৃতদেহ উঠাইয়া গর্ভগৃহের এক কোণে স্থাপন করিল ও সঙ্ঘারাম হইতে কয়েক খণ্ড কাষ্ঠ আনিয়া মৃতদেহের জন্য আধার নির্ম্মাণে প্রবৃত্ত হইল। আধার প্রায় নির্ম্মিত হইয়াছে, এমন সময় দূরে অশ্বপদশব্দ শ্রুত হইল; কাষ্ঠ ও অস্ত্র পরিত্যাগ করিয়া পরিচারক পলায়নোন্মুখ হইল, স্তূপের বাহিরে আসিয়া দেখিল যে, একজন মাত্র অশ্বারোহী স্তূপাভিমুখে আসিতেছে ও তাহার উষ্ণীষ ভারতবাসীর ন্যায়। তখন সে আশ্বস্ত হইয়া প্রতীক্ষায় তোরণদ্বারে দণ্ডায়মান হইল; অশ্বারোহী নিকটে আসিলে পরিচারক তাহাকে চিনিতে পারিল, সে নগররক্ষী জনৈক সৈনিক, তাহার সহিত নগরের পতন সম্বন্ধে অনেক কথা হইল। অবশেষে তাহার সাহায্যে রাজ্ঞীর দেহ বৃহৎ কাষ্ঠাধারে আবৃত্ত করিয়া উভয়ে কাষ্ঠাধার গর্ভগৃহের এক কোণে স্থাপন করিয়া দক্ষিণাভিমুখে প্রস্থান করিল। গর্ভগৃহের দ্বার কিয়ৎকালের জন্য রুদ্ধ হইল। সৈনিক কহিয়াছিল, ঘূর্ণাবর্ত্তের ন্যায় শকসৈন্য নগর প্রাচীরের উপর পতিত হইয়া
৭০