পাতা:পুতুলনাচের ইতিকথা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফিন তিনেক শশী আরও কয়েকটা দলে কুমুদের খোজ করিল, কোিঞ্জ সন্ধান পাওয়া গেল না। অনেক রোগী ফেলিয়া আসিয়াছে, বেশি। কলিকাতায় বসিয়া থাকিবার উপায় শশীর ছিল না। পরদিন সে গাওদিয়া ফিরিয়া যাইবে ঠিক করিল। বাকি জীবনটা কলিকাতায় বসিয়া মতির খোজ করিলে তো তার চলিবে না । গ্রামে ফিরিবার এই আভ্যন্তরিক তাগিদ। সেদিন রাত্রে শশীকে একটু অবাক করিয়া দিল। শশীর ঘরখানা রাস্তার উপরে। অনেক রাত্রে চৌকির প্রান্তে জানালার ধারে সে বসিয়া ছিল। পথে তখন লোক চলাচল কমিয়াছে, দোকানপাট বন্ধ হইয়াছে। কাল তাহাকে গ্রামে ফিরিতে হইবে। একদিন গ্ৰাম ছাড়িয়া আসিয়া বৃহত্তর বিস্তৃততর জীবন গঠনের কল্পনা করিয়া সে দিন কাটায়, আর ইতিমধ্যেই এমন অবস্থা দাড়াইয়াছে যে এক সপ্তাহ বাহিরে আসিয়া তাহার থাকা চলে না । কলেরা, বসন্ত, কালাজ্বর, টাইফয়েড এবং আরও অনেক ছোট বড় রোগে আক্রান্ত যাদের সে ফেলিয়া আসিয়াছে, একে একে তাদের কথা মনে পড়িলে আর একটা দিনও অকারণে কলিকাতায় বসিয়া থাকিবার সঙ্কল্পে নিজেকে ষ্ট্ৰতাহার খেয়ালী, বর্বর মনে হইতেছে! কে জানে ওদের কে ইতিমধ্যেই গিয়াছে মরিয়া, কার অবস্থা গিয়াছে খারাপের দিকে । ফিরিয়া গিয়া আবার ওদের রোগ-শয্যাপার্থে বসিতে না পারিলে মনে তো স্বক্তি পাইবে না । এক কি বন্ধন, এ কি দাসত্ব ? শশীর রাগ হয়। এ দায়িত্ব সে মানিবে না, এত কিসের নীতিজ্ঞান ? গ্রামে তো সে ফিরিবে না এক মাসের মধ্যে- সে কি মানুষের জীবন-মরনের মালিক ? যতদিন গ্ৰামে ছিল, যে ডাকিয়াছে চিকিৎসা করিয়া আসিয়াছে ! একৰি যদি রোগীরা তার চিকিৎসার অভাবে মরিয়া যায়, মরুক। তিন বছর *আগে সে যখন ডাক্তারি পাশ করে নাই, তখন কি করিয়াছিল। গায়ের লোক ? এখনো তাই কারুকা- শশী কিছু জানে না । S ?